০৬ মার্চ ২০২৩, ২১:৪৮

‘ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে’

  © টিডিসি ফটো

ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান  রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। সোমবার (৬ মার্চ ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদস্থ প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘উন্নয়নশীল দেশে ঋণ সংকট - চীন বা পশ্চিমা ফাঁদ!’ শীর্ষক এই সেমিনারে তিনি একথা বলেন। 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মন্দাভাব তুলে ধরে অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, প্রথমত ঋণ বা ঘাটতি আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করবে না যদি সেই ঋণ আমাদের উৎপাদন ‘প্রোডাক্টিভ ক্যাপাসিটি এক্সপেনশনে’ কাজ করে। কিন্তু এটা যদি অন্য খাতে ব্যয় হয় সেটা অর্থনীতির উপর বড় প্রভাব ফেলে। তবে বাংলাদেশের ঋণ সর্বশেষ ১০ বছরে প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ তার আগের ৪৫ বছরের দ্বিগুণ হয়েছে। 

দ্বিতীয় বিষয়টি হল, আমাদের অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন প্রভাব ফেলেছে, তার আগে কোভিডের সময় এমনকি কোভিডের পূর্বেও আমাদের অর্থনীতির মন্দাভাব এবং কাঠামোগত সমস্যা ছিল। সেই কাঠামোগত সমস্যাগুলো কোভিড এসে দেখিয়ে দিয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সেই ঝুঁকি থেকে চাপ প্রয়োগ করছে। 

তৃতীয় বিষয় হল, আইএমএফ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ৪২ মাসের যে-ই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেটা সাধারণ জনগণের উপর প্রভাব ফেলবে। কারণ বিদ্যুৎ গ্যাস সহ মৌলিক জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আইএমএফ-এর পরিকল্পনা মানুষের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সংকট নিরসন করতে পারবে না কারণ এসব সংকটের সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কারণে। 

আরও পড়ুন: তানজীমউদ্দীনের নিরাপত্তা ও ছাত্রী নিপীড়নের বিচার চান ৫৩ শিক্ষক

উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক শাহের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। মূল বক্তব্য প্রদান করেন ম্যাক্রো ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনিস উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান  রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যপক তানজীমউদ্দিন খান, সহকারী অধ্যাপক এ বি এম ওমর ফারুক প্রমূখ। 

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বা তারও পূর্বে উন্নয়শীল দেশগুলোতে যেই সংকট ছিল সেগুলো দূর করতে উন্নত রাষ্ট্রগুলো ঋণ প্রকল্প চালু করে। যদিও সেটা সবার জন্য স্বল্প সুদে কিন্তু এটাও ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফাঁদে ফেলার একটা মাধ্যম। ‘এক্সেস টু ফাইনেন্স’ না থাকায় আমাদের ঋণ নিলে চড়া সুদে নিতে হয়। যার ফলে আমাদের কারেন্সির মান কমে গেছে। ফলে আমরা যখন কিছু আমদানি করতে যাই, আমাদের ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এদিকে আবার ডলারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের খরচটাও বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আবার অন্যদিকে আমরা উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশের ঋণের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখব, উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঋণ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর থেকে অনেক গুণ বেশি। আমরা চীনের দিকে তাকাই শুধু যে তারা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলে তাদের হাত-পা বেঁধে রাখছে। কোন এক অর্থনীতিবিদ বলেছেন একটি দেশের মোট প্রবৃদ্ধির ২৩% এর কম ঋণ থাকলে ভালো, সেখানে আমাদের ঋণের পরিমান মাত্র ১০%। 

এসময় অধ্যাপক শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী তাচ্ছিল্য করে বলেন, হ্যাঁ আমাদের অবস্থা সত্যিই অনেক ভালো এবং আমাদের আরো ২ বা ৩ গুণ ঋণ নেওয়া উচিত  কারণ আমাদের ঋণ মাত্র ১০%। সকল উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো তাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি করলেও ঋণের বোঝায় জর্জরিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড জিয়া রহমান বলেন, আজকের সেমিনারে কয়েকটি বিষয় খুব লক্ষনীয় সেগুলো হল:

1. Innovative Idea- যার মূল কথা হলো, এই সেমিনারটি অসংখ্য সুন্দর ধারণার সমষ্টি 

2. Knowledge sharing- এই সেমিনারের মাধ্যমে আলাদা আলদা গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তারা তৈরী করেছে।

3. Glocolization- এর অর্থ হল অনেক কিছুর মাঝে কিছু অংশ একত্রে কিছু আইডিয়া তৈরী করা ও সবার সামনে উপস্থাপন করা। এই সবকিছু একজন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ হয় এবং চিন্তার জগৎ বিস্তৃত হয়।

এসময় ইকোনমিকস, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এই সুন্দর সেমিনারের প্রশংসা করে পরবর্তীতে এমন সেমিনার পুনরায় আয়োজনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।