তানজীমউদ্দীনের নিরাপত্তা ও ছাত্রী নিপীড়নের বিচার চান ৫৩ শিক্ষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নিরাপত্তার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সোমবার (৬ মার্চ) সংগঠনের ৫৩ জন শিক্ষক যৌথ বিবৃতিতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ‘সংবেদনশীলতার সঙ্গে’ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা এসএম এহসান উল্লাহ ধ্রুব’র আত্মহত্যা চেষ্টা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেছেন, এহসান ধ্রুবর আত্মহত্যা প্রচেষ্টা ও শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে এজন্য সম্ভাব্য দায়ী করে আবর্তিত ঘটনাক্রম কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুরো বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নীরবতাও আমাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।
সম্প্রতি ধ্রুব স্বপ্রণোদিতভাবে অধ্যাপক তানজীমের কাছে গিয়ে এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে চারিত্রিক কলঙ্কারোপন করার চেষ্টা করে। তানজীম তার কাছে সে সংক্রান্ত প্রমাণ চান। ধ্রুব যথাযথ প্রমাণ হাজির না করে, সহপাঠীদের সাক্ষী মানেন। পরে ২ মার্চ ক্লাসে ধ্রুবকে দাঁড় করিয়ে সহপাঠীদের নাম জানাতে বলেন তানজীম। নাম জানাতে রাজি না হলে তানজীম তাকে এ ধরনের গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে ও সহপাঠীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে নিষেধ করেন।'
আরও বলা হয়, ক্লাস থেকে বের হয়ে অধ্যাপক তানজীমের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও ধ্রুব ক্লাসের সবার সামনে তাকে ‘অপমান’র জন্য তানজীমকে অভিযুক্ত করেন। তিনি হুমকি দেন, যদি তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন, তার জন্য অধ্যাপক তানজীম দায়ী থাকবেন। এরপর তাকে নানাভাবে বোঝান যেন তিনি কিছু না করেন। এরপরও ধ্রুব ফেসবুক স্ট্যাটাসে সুসইসাইড নোট লেখেন ও আত্মহননের সিদ্ধান্তের পেছনে অধ্যাপক তানজীমকেই দায়ী করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগের সদস্য হবার কারণেই নাকি অধ্যাপক তানজীম তার বিরুদ্ধে বিরূপ হয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পরে খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার করা হয় ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বস্তির বিষয়, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শেষ অবধি ঘটেনি।
শিক্ষকেরা আরও বলেন, ধ্রুবর ফেসবুকে বক্তব্যের কারণে ক্যাম্পাসে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ছাত্রলীগের কিছু সদস্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে ধ্রুবর পরিস্থিতির জন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। গণমাধ্যমে দেওয়া ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে কারো কারো পোস্টের মধ্য দিয়ে তানজীমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হুমকি ছড়ায়।
তাদের বক্তব্য, ‘আমরা মনে করি, পুরো ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমের যে ভূমিকা, তা যথাযথ ছিল। সচেতন শিক্ষকের দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন। নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করতে সচেতন শিক্ষকের যা করা প্রয়োজন তিনি সে কাজটিই করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে ও বর্ণনায়ও অধ্যাপক তানজীমের ভূমিকাটি সঠিক ছিল। তার বক্তব্যে আমরা জেনেছি যে ধ্রুবর ছাত্রলীগসংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তার ধারণা ছিল না। বরং ধ্রুবই তার এ পরিচয়কে ইমেইলে সামনে আনেন। ঘটনাটিতে রাজনৈতিক পরিচয়ের জেরেই ছাত্রলীগের সদস্যরা অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রশ্ন হলো একজন শিক্ষার্থী কেন তার শিক্ষককে জড়িয়ে এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটালেন? এর জবাব খুঁজতে আগের ঘটনা টেনে আনতে হবে। নানান সূত্রে জানা গেছে, ধ্রুব যার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছিলেন, সে মেয়েটির কাছে তিনি প্রেম প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এ ঘটনার আগে মেয়েটির বিরুদ্ধে আন্তঃব্যক্তিক পর্যায়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা ছড়িয়েছেন, যাকে পরিকল্পিত নিপীড়ন হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা নিরসনে শিক্ষকদের ন্যায়ের পক্ষেই অবস্থান নিতে হয়। অধ্যাপক তানজীম সবার সামনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে উদ্যোগ নিয়ে ঠিক কাজ করেছেন। এ চেষ্টাকে ‘র্যাগিং’ বলা চলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে শিক্ষকের এটাই যথোপযুক্ত আচরণ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা নারী শিক্ষার্থীর ওপর ধ্রুব’র বাচিক ও মানসিক নিপীড়নের শাস্তি দাবি করেন। অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেন, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা করা শিক্ষার্থীর মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ নেয়ার জন্যও বিভাগ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীর আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিও করা হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকেরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক গৌতম রায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম যোগাযোগ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মনিরা শরমিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবুল ফজল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোপালগঞ্জ) বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শামীমা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী ফরিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক অর্পিতা শামস মিজান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আরাফাত রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আর রাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও আইনুন নাহার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শামস্ আরা খাঁন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ নাহিদ নিয়াজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শেহরীন আতাউর খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হাবিবা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: নুরুজজামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক মিম আরাফাত মানব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: সাজ্জাদ হোসেন জাহিদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার আশরাফুল মুনিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সহকারী অধ্যাপক আলী সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক সায়মা আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম ও প্রভাষক সামিয়া জামান।