০৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৪

ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ রাবি শিক্ষার্থীরা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ রাবি শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বেশ কিছু রাস্তা থেকে সৃষ্ট ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। কমছে অক্সিজেন, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ফাল্গুন মাসের বাতাস বইছে। সাথে নেচে উঠছে বালু আর ধুলা। এছাড়া এসব রাস্তায় রিক্সা, মোটরসাইকেলসহ যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ছে আরও বহুগুণ। এতে প্রতিদিনই ছড়িয়ে পড়ছে ধুলার দূষণ। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। অথচ এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে প্রচুর ধুলাবালির কারণে স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা। এমনকি রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করাও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নিঃশ্বাসে অক্সিজেনের পরিবর্তে ধুলাবালি গ্রহণ করছি।।

চিকিৎসকরা বলছেন, গত দুই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সমস্যা অ্যালার্জি ও অ্যাজমা। একদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তন আর অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ধুলাবালি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এক কথায়, হুমকির মুখে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল অভিমুখের রাস্তা, শহিদ হবিবুর রহমান হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের অভিমুখের রাস্তা, প্যারিস রোড থেকে পশ্চিমপাড়া যাওয়ার রাস্তা, প্রশাসন ভবনের সামনে, বাসস্ট্যান্ড যেন ধুলার রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলের ফলে এসব রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এসব খানাখন্দ ইটের খোয়া আর বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় এসব জায়গা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে ধুলাবালি।

আরও দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদের পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে। ছাদ ভেঙে সে ময়লা আবর্জনাগুলো সরাসরি নিচে ফেলা হচ্ছে। ফলে ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পাশে থাকা একটি পুকুরের অবস্থাও বেহাল দশা।

প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে ক্যাম্পাসে বেড়েছে এলার্জি সমস্যা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বীথি। তিনি বলেন, নেকাবের নিচে দুইটি মাক্স ব্যবহার করেও ধুলাবালির কারণে প্রতিনিয়ত হাঁচি-কাশির জন্য নাক-গলা ব্যাথাসহ ইনফেকশন হচ্ছে। ধুলাবালি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে ধুলাবালির প্রকোপ এত পরিমাণ বেড়েছে, যে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো মনে হয় ধুলোয় ভরপুর। কখনো উল্টো বাতাসে সরাসরি নাকে মুখে এসে পরছে। এতে বেড়েছে এলার্জির সমস্যা। সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

আরেক শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক পরে হাঁটলেও ধুলাবালি থেকে রক্ষার উপায় নেই। এসব ধুলাবালির জন্য আমরা স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ধুলাবালি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস. এম. শফিউজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে চোখে সমস্যা হতে পারে। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ধুলাবালি আমাদের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করছে। ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ নানা সমস্যা রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে খাবারের দোকানগুলোতে ধুলাবালি যাচ্ছে। এই খাবার গ্রহণে হজমে সমস্যা সৃষ্টি হবে। ক্যাম্পাসে যে গাছগুলো রয়েছে এগুলোর পাতায় ধুলার আস্তর পড়েছে। প্রতিটি গাছের পাতা কিছু বাষ্প ছেড়ে দেয়ে এগুলোতে ধুলাবালি লাগার ফলে সেটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পরিবেশ তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যে পানির উৎসগুলো রয়েছে সেখানে গিয়ে ধুলাবালি জমছে ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। ধুলাবালির কারণে ক্যাম্পাসের পরিবেশের ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এক কথায় ক্যাম্পাসের যে পরিবেশ তা বাধাগ্রস্ত করছে এই ধুলাবালি। নির্মাণ কাজে ধুলাবালি হবে স্বাভাবিক। তারপরও আমি বলব, পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ছাদ থেকে সরাসরি ময়লা আবর্জনা নিচে ফেলা হচ্ছে। যদি শহর অঞ্চলের মতো টিন দিয়ে ঘিরে একটি নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে ফেলা হতো, সেখান থেকে ট্রাক এসে নিয়ে যেত, তাহলে ধুলাবালি থেকে পরিবেশ অনেকটা রক্ষা পেত। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গত দুই-তিন মাস থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এসেছে সর্দি, কাশি, অ্যাজমা সমস্যা নিয়ে। ক্যাম্পাসের সৃষ্ট ধুলাবালির কারণে এই রোগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাসে সৃষ্ট ধুলাবালি থেকে আরও ফুসফুসে সমস্যা, নাক, কান, গলায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এলার্জি আর অ্যাজমার মতো নানা রোগ হতে পারে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ধুলা-বালিহীন রাখা আবশ্যক। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে নির্মাণ কাজ চলছে। শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও মনে মনে ধুলাবালিতে বিরক্ত হচ্ছি। ধুলাবালির সমস্যা যাতে কিছুটা লাঘব হয় সেজন্য পানি ছেটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাটি খননের কাজ শেষ হলেই ধুলাবালি অনেকটা কমে যাবে।