পঞ্চদশ বিজেএস পরীক্ষা
সর্বকনিষ্ঠ সহকারী জজ হলেন ঢাবির স্বপন-মিসৌরী
- রিফাত হক, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:১৮ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৬ PM
পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় সর্বকনিষ্ঠ সহকারী জজ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন স্বপন হোসাইন ও মেহবুবা মিসৌরী। তারা দুজনেই বিভাগটির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৪৫ ব্যাচের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই শিক্ষাবর্ষের আর কেউ পঞ্চদশ বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
জানা যায়, পঞ্চদশ বিজেএস পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা শুধু অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কারণে বা স্নাতক সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এ পরীক্ষায় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাবি থেকে দুজন উর্ত্তীণ হয়। তবে বিইউপি থেকে একই শিক্ষাবর্ষের কেউ উর্ত্তীণ হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার স্বপন হোসাইন মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তার জন্ম পাবনা সদর উপজেলায়। ২০১৫ সালে তিনি পাবনার সদর উপজেলার বাসুদেবপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি (দাখিল) এবং ২০১৭ সালে আতাইকুলা সড়াডাঙ্গী আলিম (মডেল) মাদ্রাসা থেকে এইচএসসি (আলিম) পাস করেন। এছাড়াও ঢাবির আইন বিভাগের স্নাতক (এল.এল.বি) পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছেন।
অন্যদিকে মেহবুবা মিসৌরী পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৮তম স্থান অর্জন করেছেন। তার জন্ম যশোরের কেশবপুর উপজেলায়। ২০১৫ সালে তিনি পাঁচারই টি.এস. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে কেশবপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি ঢাবির আইন বিভাগের স্নাতক (এল. এল. বি) পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় ‘খ’ ইউনিটে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিলেন।
বর্তমানে তারা দুজনই স্নাতকোত্তর (এল. এল. এম.) পরীক্ষা দিচ্ছেন। চলতি মাসের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং পরীক্ষা এখনও চলমান।
বিজেএস এর শর্তানুযায়ী, যারা স্নাতকে 'এপিয়ার্ড' হিসেবে পরীক্ষা দিবে তাদের স্নাতক পরীক্ষা আবেদনপত্র দাখিলের শেষ তারিখ (এক্ষেত্রে ১৫তম বিজেএস এর জন্য শেষ তারিখ ছিল ১২ই জুন) বা তৎপূর্বে কার্যক্রম শেষ হতে হবে।
স্বপন হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, পঞ্চদশ বিজেএসে আমাদের আবেদনের শেষ সময় ছিল গত বছরের ১২ জুন। আমাদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা ৮ জুন শেষ হয়। আর ভাইভা শেষ হতে সময় লাগে ১২ জুন। পরীক্ষা শেষ করে আমরা সেদিনই আবেদন করি।
মেহবুবা মিসৌরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আবেদনের যখন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, তখনও আমাদের সেশনের ফোর্থ ইয়ার ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়নি। আমাদের পরীক্ষার সকল কার্যক্রম (পরীক্ষা ও ভাইভা) শেষ করে আবেদনের সর্বশেষ দিনে ফর্ম তুলে আবেদন করি।
অনুপ্রেরণা, ছাত্রাবস্থায় জব পাওয়া ও প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথমত মহান আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া যিনি আমাকে এমন সাফল্য দান করেছেন। ছাত্রাবস্থায় জব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল মূলত যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখনই। সেই সময়ে কয়েকজন সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যারা তখনও মাস্টার্সের ক্লাস করছিলেন আমাদের সাথে একই বিল্ডিংয়ে।
তিনি বলেন, আমি যেহেতু গ্রাম থেকে উঠে আসা আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল এমন যে, পড়ালেখা শেষ করার পরে আরো কয়েকবছর অপেক্ষা না করলে চাকরি হয় না। অবশ্য হলে উঠেও এমনটা অহরহ দেখেছি বা এখনো দেখছি। কিন্তু ঐ সিনিয়রদের এমন সাফল্য দেখে আমি ভাবতাম যদি আমি এমন সাফল্য অর্জন করতে পারতাম!
তিনি আরও বলেন, সেই সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রথম বর্ষ থেকেই যে বিজেএস বা চাকরির বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছি এমন না। বরং আমি ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি নিজের মত করে এবং বাইরের বিভিন্ন বই পড়েছি। আমি যেটুকুই পড়েছি বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করেছি। ফলে অনার্স শেষ করার আগ পর্যন্ত আলাদাভাবে বিজেএস নিয়ে তেমন কোন পড়াশোনা করি নি। বরং ডিপার্টমেন্টের জন্য নির্ধারিত পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।
স্বপন জানান, সবশেষে অনার্স ফোর্থ ইয়ারের পরীক্ষা দিয়ে বিজেএস এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। এক্ষেত্রে আমার প্রধান প্রধান আইনগুলো ভালো পড়া থাকায় স্বল্প সময়ে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়েছে। অনেক আইন আগে পড়া ছিল না, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো স্কিপ করা যায় সেগুলো স্কিপ করে বাকিগুলো তখন পড়েছি। আর টিউশন করার বদৌলতে বাংলা ও ইংরেজি বেসিক মোটামুটি ভালো ছিল এবং পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস আর মোটামুটি লেখালেখি করার অভ্যাস থাকায় সাধারণ জ্ঞানও ভালোই ছিল। ফলশ্রুতিতে এই তিনটা বিষয়ের ৩০০ মার্কসের জন্য তেমন বেশি পরিশ্রম করতে হয় নি। এক্ষেত্রে আমি বেশি সময় ব্যয় করেছি সাধারণ গণিতে কারণ সেখানে আমি দূর্বল। আর বাকিটা সময়ে আইন ঠিকমত গুছিয়েছি।
অনুপ্রেরণার বিষয়ে মেহবুবা মিসৌরী জানান, অনুপ্রেরণা বলতে আমার আব্বুর বয়স হয়ে গেছে। বড় ভাইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করছে, ছোট ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে গ্রামে কৃষি খামার দিয়েছে। তো আমার ওপর আব্বুর একটু আবদার ছিল সরকারি চাকরির। আমার ইচ্ছা ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু আমার নানার ইচ্ছা ছিল আমি জজ হই। গত বছর করোনায় আমার নানা ইন্তেকাল করেন। তো তখন ঠিক করলাম নানার ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করব।
পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে মেহবুবা মিসৌরী বলেন, আনুষ্ঠানিক কোন প্রস্তুতি ছিল না। করোনার সময় বাড়িতে আমার চাচাতো ভাই-বোন, ভাইপো-ভাইঝিদের পড়িয়েছিলাম। ওদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী থেকে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী ছিল। তো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এর জন্য আলাদা কোন প্রস্তুতি নিতে হয়নি। আর আইনের বিষয়গুলোর জন্য একাডেমিক পড়াশোনা যা করেছি আলহামদুলিল্লাহ তাতেই হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। এতে ১০৩ জনকে সহকারী জজ পদে সুপারিশ করা হয়েছে।