‘ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদের মাঝে শহীদ মিনার নিয়ে ধারণা অস্পষ্ট’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচক ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। এছাড়া আলোচনা সভায় 'বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষা' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ বলেন, ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি অর্জিত হলেও বাংলা এখনো রাষ্ট্রের ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান চালু থাকলেও ক্রমবর্ধমান হারে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের উত্থান আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। দেশের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, যারা যৎসামান্য বাংলা ভাষা শিখছে। কিন্তু একুশের তাৎপর্য, এমনকি ভাষা আন্দোলন, শহিদ মিনার সম্পর্কে তাদের ধারণা অস্পষ্ট এবং অনেকাংশেই নেতিবাচক।
তিনি আরো বলেন, উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহারের বিপক্ষে কতিপয় খোঁড়াযুক্তি উপস্থাপন করা হয়। প্রথমত পাঠদানের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক জ্ঞানের বই বাংলায় নেই, যা পাওয়া যায় সবই ইংরেজিতে। এক্ষেত্রে উত্তর হল বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করে নিলেই হয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত জাতি তাদের নিজ ভাষায় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে যেমন জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জার্মানি। এখন কেউ যদি বলেন তারা আমাদের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ নয় বা পিছিয়ে আছে সে ক্ষেত্রে কিছু বলার নেই।
আরো পড়ুন: একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে সংঘর্ষ
আলোচনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ৮ ই ফাল্গুন মিলেছে কিন্তু বারটি মিলেনি সেই দিনের সাথে। সেই দিন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছিল। বাংলা ভাষার চেতনাকে সমৃদ্ধ করতে তরুণ প্রজন্মকে ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত না হলে আগামীর নেতৃত্ব তৈরি হবে না৷ নেতৃত্বের গুণাবলির সাথে দেশপ্রেম থাকতে হবে। যা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, একুশের ভাষা আন্দোলন আমাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস ছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য, এই জাতির জন্য অনেক করে গিয়েছেন। বাঙালির পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো স্বাধীনতা ছিল না। ভাষা আন্দোলন ছাড়া আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন হতে পারতাম না। এটিই এই জাতির একমাত্র স্বাধীনতার ইতিহাস যা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আমাদের হয়েছে।
তিনি বাংলা ভাষার চেতনা ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্টগুলো আমরা বাংলায় অনুবাদ করেছি। বাদ বাকিগুলোও আমরা করার কাজ করছি। সংবিধান অনুযায়ী আমরা সবকিছুতেই বাংলা ভাষার প্রচলন করবো। আমরা বাঙালি, স্বাধীন দেশের নাগরিক। পৃথিবীতে একজন বাঙালী থাকতেও কেউ বাংলা ভাষাকে আঘাত করতে পারবে না।