১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:০২

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে সেজেছে টিএসসির চায়ের দোকান

চায়ের দোকানে রিকশাচিত্র

আবারও রিকশাচিত্রে সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকার চায়ের দোকানগুলো। দোকানগুলোর দেওয়াল, বসার বেঞ্চ থেকে শুরু করে টেবিল, চায়ের কেটলি সর্বত্র রং তুলিতে ফুটে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান। এমনকি সাজ-সজ্জা থেকে বাদ যায়নি পাশের গাছগুলোও। বিভিন্ন রঙিন ফিতা ব্যবহার করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গাছগুলোকে।

গতবারের মতো এবারেরও এই কার্যক্রমের প্রধান উদ্যোক্তা মডেল ও অভিনেত্রী মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ-২০১৯ এর শিরিন আক্তার শিলা ও তার তিন সদস্যাবিশিষ্ট একটি টিম। শিরিন আক্তার শিলাসহ বাকি দুজন হলেন সীমান্ত সাহা ও জেরিন সিনথি। তাদের মধ্যে শিরিন আক্তার শিলা ও সীমান্ত সাহা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আর জেরিন সিনথি হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী। 

এবারের তাদের শিল্পকর্মের প্রতিপাদ্য ‘দ্বিতীয় অধ্যায়-চায়ের কাপে বাংলার মুখ: চায়ের কাপে হারিয়ে যাওয়া বাংলার রূপ দেখা।’ গত ছয়দিন ধরে টিএসসি সংলগ্ন চায়ের দোকান এবং চত্বরে রিকশা চিত্রের নান্দনিক শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলছেন তারা। সোমবার(১৩ ফেব্রুয়ারি) তাদের এই রিকশা চিত্রের কার্যক্রম শেষ হয়।

আরো পড়ুন: মোনাজাত ধরার পর ‘অনুপস্থিত’ বাহালুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছানাউল্লাহ

সরেজমিনে দেখা যায়, রিকশা চিত্রে এবার যেসব সংস্কৃতির উপাদান ছিল তা হলো: ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের নাড়াই, ঢেঁকি, ধান সিদ্ধ, পাটের জাগ দেয়া, বাংলার যাত্রাপালা, বটের তলায় কবি গানের আসর, গ্রামীণ সার্কাস পার্টি, লাঠিখেলা, নকশিকাঁথা বোনা, নৌকা-বাইচ, পালকি, কনের আগমন ইত্যাদি।

এই উদ্যোগের বিষয়ে শিরিন আক্তার শিলা জানান, চায়ের দোকান নেই বাংলাদেশে এমন রাস্তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।  বাঙালি হিসেবে চায়ের টং আমাদের একটা মিলনমেলার মত। অথচ চায়ের দোকানগুলো অনেক নোংরা স্যাঁতসেঁতে। যদি বাইরে দেশগুলোকে দেখি তাহলে দেখা যাবে ওরা রাস্তার আশেপাশে জিনিসপত্রগুলো তাদের সংস্কৃতির উপাদান দিয়ে সুন্দর করে রেখেছে । একারণে টিএসসির চায়ের দোকান গুলোকে আমরা রিক্সা আর্ট এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা বাঙালি হয়ে আমাদের বাঙ্গালিয়ানাকে কতটা ধরে রাখতে পেরেছি? সমাজের একটা নির্দিষ্ট  অংশ এটাকে সুন্দর করে রেখেছে,  কিন্তু একটা নির্দিষ্ট অংশ কখনো এই সমাজের রেভোলিউশন  এর কারণ হতে পারে না । আমরা নেমেছি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে, যা আমরা একা পারব না । আমাদের সাথে সবার আসতে হবে । তাই সাধারণ মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমরা আমাদের চায়ের টং কে ক্যানভাস হিসেবে বেছে নিয়েছি, যেখানে বাঙ্গালি হিসেবে আমরা কি হারাচ্ছি সেটা আমরা তুলে ধরতে পারি এবং সেটাকে বচিয়ে রাখতে পারি।

আরো পড়ুন: ঢাবিতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস হাজার হাজার শিক্ষার্থীর

এ বিষয়ে আরেক উদ্যোক্তা সীমান্ত সাহা জানান, গতবছর আমরা এই টিএসসিতে রিকশা চিত্রে নানা রকম চিত্র তুলে ধরেছিলাম। এবার চিন্তা করলাম কী করা যায়। তারপর সিদ্ধান্ত নেই এবারের রিকশা চিত্রে আমরা বাঙালির সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান: ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, ঢেঁকি, বাংলার যাত্রাপালা, গ্রামীণ সার্কাসপার্টি ও লাঠিখেলা ইত্যাদি তুলে ধরব। তারপর আমাদের এই কার্যক্রম। 

উল্লেখ্য, গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে টিএসসি এলাকায় চায়ের দোকানগুলোতে 'দ্বিতীয় অধ্যায়: চায়ের কাপে রিকশা-চিত্র' শিরোনামে প্রথম বারের মত রিকশা চিত্রের এই শিল্পকর্ম করেছিলেন শিলা এবং তার টিম। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও তারা ভিন্ন শিরোনামে তাদের শিল্পকর্ম তুলে ধরেছেন।