১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩২

রাবি অধ্যাপকের সংগ্রহশালার প্রতিটি কোণে ইতিহাস

অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের হেরিটেজ আর্কাইভস  © টিডিসি ফটো

ব্যতিক্রম উদ্যোগে গড়ে ওঠা এক সংগ্রহশালার নাম হেরিটেজ আর্কাইভস। যেখানে সংগৃহীত হয়েছে তিন হাজার ৯৫ শিরোনামে প্রায় ৩০ হাজার সাময়িক পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও গবেষণা জার্নাল। রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ পোস্টার ও পাঁচ হাজার লিফলেট। প্রায় তিন হাজার ২০০টি জীবনী গ্রন্থের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা জীবনী রয়েছে ৫৭২টি।

আরও রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ গ্রন্থ, প্রায় ৫০০ রাজনৈতিক সাহিত্য। ৬৪ জেলার প্রায় ১০ হাজার গ্রন্থ, স্মরণিকা ও বার্ষিকী। রয়েছে ৪৭১টি এমফিল ও পিএইচডি থিসিস এবং আদিবাসী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

যে কোনো বিষয়ের ওপর লেখা স্মরণিকা, লিফলেট, পোস্টার, ফেস্টুন, বুলেটিন, মেনিফেস্টো, বার্ষিকী, ব্যঙ্গচিত্র, স্মারকচিহ্ন ও সাময়িকী পাওয়া যাবে এ সংগ্রহশালায়। হোক সেটা ১৮৭২ সালে করা দেশের প্রথম আদমশুমারী রিপোর্ট কিংবা ভূমি জরিপের রিপোর্ট অথবা সরকারি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা দুষ্প্রাপ্য রিপোর্ট।

এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা 'হেরিটেজ: বাংলাদেশের ইতিহাসের আর্কাইভসে' নামের একটি সংগ্রহশালা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান এ সংগ্রহশালাটি গড়ে তুলেছেন তাঁর নিজ বাসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের অদূরে জামরুল তলায় অবস্থিত এ বিশাল সংগ্রহশালাটি। 

গুণী এই মানুষটির সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। একান্ত আলাপচারিতায় চমৎকার এ সংগ্রহশালাটির আদ্যোপান্তের গল্প শোনান তিনি। ইতিহাসের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, স্থানীয় ইতিহাসের ওপর পিএইচডি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম একসময়। কারণ ছিল তথ্য সংকট। তথ্য সংগ্রহে নেমে দেখলাম কোথাও এক জায়গায় স্থানীয় ইতিহাসের ওপর তথ্য পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, ৯০'র দশকে নেদারল্যান্ডসের একটি আর্কাইভসে গিয়ে দেখলাম সেখানে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও সাময়িকী সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকেই আমি বাংলাদেশেও একটি হেরিটেজ আর্কাইভস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে আমি প্রতিদিন রাজশাহীর সাহেব বাজারে পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে কেজি দরে বইপত্র, ম্যাগাজিন কিনে নিয়ে আসতাম। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাসাতেই লিফলেট, পোস্টার ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের স্মরণিকা ও বার্ষিকী সংগ্রহ করে আনতাম। যাদের আমি পড়াতাম তাদের বলতাম স্কুল-কলেজে স্মরণিকা ও বার্ষিকী পেলে যেন নিয়ে এসে আমাকে দেওয়া হয়! বেশ সাড়া পেলাম, ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধুবান্ধবরাও লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার, স্মরণিকা ও বইপত্র দিতে শুরু করলো।

অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, স্মরণিকা ও সাময়িকী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি দেশের সময়কে জানতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ বাংলাদেশের কোথাও এসব সংগ্রহ করে রাখা হয় না। তাই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই এসব সংগ্রহ করা শুরু করি।

আরো পড়ুন: আমরা থেমে থাকবো না, ভালো কাজ করেই যাবো: শিক্ষামন্ত্রী

তাছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম, শ্রমিক, নারী, রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ ও ডকুমেন্টস, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার স্মরণিকা ও বার্ষিকী, ১৯৯৮ সাল থেকে  সংবাদ পত্রিকা, বামপন্থী পত্রিকা ভ্যানগার্ড ও একতা পত্রিকা, ৫০টি বিষয়ে পেপার ক্লিপিং, দৈনিক পত্রিকার ঈদ ও নববর্ষ সংখ্যা কয়েকশত, প্রায় ৩০০টি বিষয়ে কয়েক হাজার গ্রন্থ ইত্যাদি এখানে সংগৃহ করেছেন তিনি।

অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। যখন যেখানে পেয়েছি, ট্রাক ভর্তি করে কিনে এনেছি। অনেক সময় কিনে কুরিয়ারে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর বেছে হেরিটেজ আর্কাইভসে রাখা হয়েছে। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি জেলায় আমার নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। তাদের জেলার স্থানীয় ইতিহাসের ওপর কোনো লেখা ম্যাগাজিন বা বইপুস্তক বের হলে আমাদের দেন।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, আর্কাইভসের নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নেই। আমার ও ব্যক্তি অনুদানে এটি চলে। নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস করা গেলে আর্কাইভস নিয়ে কোনো চিন্তা থাকতো না। বর্তমানে স্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। অনেক লিফলেট, পোস্টার, ম্যাগাজিন ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।