জাবির হলে তিতুমীর কলেজছাত্রকে আটকে ছাত্রলীগের নির্যাতন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অসিত পালের বিরুদ্ধে। অসিতের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্তরা প্রথমে ভুক্তভোগীকে মারধর করে পরে তার থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর নাম শেখ ওয়ালিউল্লাহ। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে বর্তমানে চাকরির সন্ধানে রয়েছেন। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলে এ ঘটনা ঘটে।
পরে রাত ১০টার দিকে ওয়ালিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পরে বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় সাংবাদিক ও হল প্রশাসনের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানান ওয়ালি। ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, তার শরীরে স্কোপোলামিন (ডেভিলস ব্রেথ) প্রয়োগ করে ‘চেতনাহীন’ করে দেওয়া হয়েছে।
ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘আমি মূলত বিকেলে বাসে করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেই। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে এসেছি এর কোনো কিছু মনে করতে পারছি না। আমাকে একটি রুমে বন্দি করে ৪ জন মিলে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন শুরু করেন।
আরও পড়ুন: মাদকবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ‘দ্বিতীয় চাপায়’ মৃত্যু হয় রিকশাচালক কুদ্দুসের
নির্যাতনের পর টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে তারা আমাকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা দিতে না পারায় তারা আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করে ও চাকু দেখিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। পরে আমার সাথে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা ও বাড়িতে ফোন দিয়ে বিকাশে ৫ হাজার টাকা আদায় করে।
এদিকে, সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাত ১টায় হল প্রশাসন অভিযান চালালে ২১৪ নম্বর কক্ষে প্রাথমিক তদন্ত শেষে একটি লোহার পাইপ, কয়েকটি চাকু, ইনজেকশন ও মাদকদ্রব্য গ্রহণের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে অসিত পালের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘অভিযুক্ত অসিত পালকে অন্য ঘটনায় আড়াই মাস আগে ছাত্রলীগ থেকে মৌখিক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনায় তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অবচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মরত সাংবাদিক ও শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্তের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুন্ডু।
জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুন্ডু বলেন, ‘ভুক্তভোগীর যাওয়ার কথা লক্ষীপুর। তাকে ঘটনাক্রমে অজ্ঞান পার্টির ফাঁদে ফেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। আমরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জেনেছি তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে এক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এমন জঘন্য ঘটনার জন্য লজ্জিতবোধ করছি। সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বলেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।