ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রাতভর সংঘর্ষ, আহত ৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
হলের শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী সাব্বির অনিক নামের এক কর্মীকে ৫০০৬ নং রুম থেকে বের করে সেটিতে তালা লাগিয়ে দেয় সাদ্দাম ও ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওই হলের নাঈম-মুক্তের গ্রুপ। পরে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সৈকতের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, রুম দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ১০১৫, ৫০০৬, ৩০১০, ৪০০১, ২০০৪, ৪০১০, ৩০১৪, ২০০৯, ৩০০৮, ২০১৮, ৪০১৮, ৩০০৭ কক্ষগুলোতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা এবং ভাংচুর করা হয়। এতে প্রায় ৯জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, হামলাকারীরা ৫০০৬ নং কক্ষে অবস্থান করা সাব্বির অনিকের মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, আহতরা সকলে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। আহতদের মধ্যে আছেন- জিওগ্রাফি বিভাগের ইমামুল হাসান, এপ্লাইড ম্যাথের মাহমুদুল হাসান, পারভেজ, রিদওয়ানুর, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের কল্লোল, কাউসার, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহেদ প্রমুখ। তাদের মধ্যে চারজন মাথায় আঘাত পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন। আহতদের মধ্যে ইমামুল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ বিষয়ে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ফজলুল হক হলের দক্ষিণ ভবনে সিট সংক্রান্ত কারণে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমি আমার রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১০ থেকে ১২ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি। খাওয়া শেষে সবাই রুমে অবস্থান করছিলাম। এমতাবস্থায় রাত দেড়টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন অতর্কিতভাবে দেশিও অস্ত্রসহ আমার রুমে হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা হামলা করে দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তৎক্ষণাৎ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলি। এসময় তারা নিজেদের ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী বলে স্বীকার করে।
এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আনোয়ার আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে আমার কোনো নির্দেশনা ছিলো না এবং ছাত্রলীগে কোনো গ্রুপিং নেই। বরং আমার অনুসারীরাই আহত হয়েছে। অভিযোগটি তারা বেখেয়ালিভাবে করেছে। হামলায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৈকত আরও বলেন, আমি নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। কোনো হলে গিয়ে এখনও বসিনি এবং কারা আমার রাজনীতি করে এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। হল সভাপতি- সেক্রেটারি যারা সদ্য সাবেক হয়েছে হলের সবাই তাদের অধীনে রাজনীতি করতো।
এদিকে, হলের অভ্যন্তরে এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে জরুরি সভা ডেকেছে হল প্রশাসন। সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমরা অবহিত হয়েছি। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভা থেকে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো এবং যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।