অছাত্রদের দখলে জাবির হল, নবীনদের গাদাগাদি গণরুমে

বিশ্ববিদ্যালয়টির গণরুমে শিক্ষার্থরা
বিশ্ববিদ্যালয়টির গণরুমে শিক্ষার্থরা  © সংগৃহীত

নিয়মিত ক্লাস শুরুর ৫ মাস পরেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের হলে জায়গা হয়নি। ক্লাস শুরুর আগে প্রশাসন বেশ কয়েকবার গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও দেখা যাচ্ছে না তার কোনো বাস্তবায়ন। একদিকে সংকট আর অন্যদিকে রাজনীতি আর অছাত্রদের আধিপত্যে হলে ঠাঁই নতুন সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের। ফলে গণরুমেই গাদাগাদি করে থাকছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো চালু করা সাপেক্ষে পুরাতন হলগুলোতে ‘গণরুম’ না রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতা ও অব্যবস্থাপনায় নতুন হলগুলো উদ্বোধন করতে পারেননি তারা। ফলে কয়েক দফায় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর সময়সূচি পেছানো হয়। এরপর একটি করে হল উদ্বোধন হলেও সিট রাজনীতি ও অছাত্রদের দাপটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার স্বপ্ন গণরুমে আটকে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের কমন রুম, ডাইনিং রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকছেন। সেখানে এক জনের জায়গায় কমপক্ষে ৩-৪ জন শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুম ছেড়ে ‘মিনি গণরুমে’ উঠেছেন। সেখানে তারা দুই জনের রুমে ৬-৮ জন এবং চার জনের রুমে ১৪-১৬ জন থাকছেন।

আরও পড়ুন: ঢাবির ১৫০ গণরুমের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলগুলো ৪৩ ও ৪৪তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। আবার ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৪২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরাও হলে থাকছেন। অন্যদিকে নবনির্মিত দুটি হল চালু করা হলেও সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে পুরাতন হলের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে পুরাতন হলের ফাঁকা আসনগুলো ‘মিনি গণরুমে’ থাকা তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা দখল করছেন। ফলে গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা উঠছেন মিনি গণরুমে। সবমিমিয়ে অছাত্ররা হলে অবস্থান করায় এবং অব্যবস্থাপনায় নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে বলে জানান হল সংশ্লিষ্টরা।

ইংরেজী বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। কারণ এটা দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আজকে প্রথম দিনেই আমি হতাশ। এতো ছোট একটা রুমে একশোর অধিক স্টুডেন্ট থাকতে হচ্ছে। এখানকার পরিবেশেও আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। আর পড়াশুনার পরিবেশ তো একেবারে নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন: সিট না পেয়ে হলের মসজিদে উঠছে নতুন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, নতুন হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওঠানো হয়নি। তবে শিগগিরই নবনির্মিত অন্য চারটি হল চালু করে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হবে। সেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া হল থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার জন্য সব হলের প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বের করতে পারলে এবং নতুন হলগুলো চালু হলে গণরুমের সংকট নিরসন হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত সবগুলো হল চালু হলে আবাসন সংকট কমে যাবে এবং গণরুম সংস্কৃতি উঠে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ লক্ষ্যে কাজ করছেন।