০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৮

৩৭ বছরেও নিরসন হয়নি জাবি গ্রন্থাগারের আসন সংকট

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, জাবি  © টিডিসি ফটো

ভোর তখন সবে পাঁচটা। পূর্ব আকাশে সূর্য কেবল উঁকি দিচ্ছে। এমন সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের ব্যাগের দীর্ঘ লাইন । অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এই অপেক্ষা একটা আসনের জন্য। শিক্ষার্থীদের তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিদিন গ্রন্থাগার খোলার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই অপেক্ষা করেন তারা। কখনও একটু দেরি হলেই সেইদিন আর পড়ার সুযোগ পান না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাবির বর্তমান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মূল ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৮৫ সালে। ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই তিনতলা ভবনটিতে আসন প্রায় ৪৪৭ টি। অর্থাৎ প্রতি ৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য আসন মাত্র একটি। আর এর ফলেই আসন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে, শুধুমাত্র আসন সংকটই নয় অভিযোগ রয়েছে গ্রন্থাগারের পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়েও।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আতিক হোসেন বলেন, “গ্রন্থাগারে একটা সিট পাওয়ার জন্য ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রবেশ করে দেখা যায় আশেপাশে অনেকেই কথা বলতে শুরু করেছেন, সেইসাথে কিছু সময় পরই শুরু হয় নির্মাণকাজের উচ্চ-শব্দ। এককথায় গ্রন্থাগারে পড়ার পরিবেশ থাকে না। এছাড়া, গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপনাও নিম্নমানের। ওয়াশরুমগুলো দিনের পর দিন পরিষ্কার করা হয় না।” 

রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের সবগুলো আসনই পূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থীই জায়গা না পয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তবে, গ্রন্থাগারে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্যও নেই কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। কেউ উচ্চ শব্দে কথা বলছেন, আবার কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, যা অন্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এছাড়া, গ্রন্থাগারে রয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতারও অভাব। 

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা হলে তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই আসন সংকট নিরসন সহ সকল সমস্যা নিরসনের আশ্বাস দিচ্ছেন কিন্তু কোনো কথার-ই বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। সবকিছু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

এ বিষয়ে গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা আইআইটি'র অধ্যাপক শামীম কায়সার বলেন, “বর্তমানে গ্রন্থাগারের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রথম বর্ষের (৫১ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ করা হবে। এই কক্ষে তারা তাদের নিজের আইডি কার্ড দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। “

গ্রন্থাগারের উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, “এক হাজার পাঁচশত বইয়ে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ লাগানো হয়েছে। কিউ গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে ফেরত না দিলে মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে ফেলবে। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু করা হতে পারে। এছাড়া আমাদের চারজন লাইব্রেরিয়ানকে অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ভারতের কিছু গ্রন্থাগার পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়েছে।” 

গ্রন্থাগারের বিভিন্ন সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, “সংকট নিরসনে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি বহুতল গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এই গ্রন্থাগারে স্মার্ট সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট গ্রন্থাগার ও স্মার্ট প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নাই।”