ভর্তির পর জাবিতে পা রাখার তিনদিনেই লাইফ সাপোর্টে জাহিদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সদ্য ভর্তি হওয়া ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের নবীন বরণ ও ক্লাস শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি)। নিয়ম অনুযায়ী, এর আগের দিন হলে উঠেছেন নতুন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে পা রাখার তিনদিন পরই জাহিদ হাসানের স্থান হলো হাসপাতালের আইসিইউতে। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি।
ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১ ব্যাচ) জাহিদ হাসান। তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পরে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত এবং মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ করাসহ চারদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে, মোটরসাইকেল চালকের শাস্তি নিশ্চিত করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সামনে গতি নিরোধক নির্মাণ করতে হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন মিছিলে বাধা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হলে ফিরে যান বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গেরুয়া এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন জাহিদ। পথে মাওলানা ভাসানী হলসংলগ্ন এলাকায় সড়কের অপর পাশে বন্ধুদের দেখেন তিনি। সড়ক পার হয়ে তাদের কাছে যাওয়ার সময় দ্রুতগতির মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। চালাচ্ছিলেন দর্শন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস মাহমুদ।
আরো পড়ুন: নিরাপদ ক্যাম্পাস চেয়ে জাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ, ছাত্রলীগের বাধা
আহত জাহিদকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ও পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় তাকে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাকিব আহমেদ জানিয়েছেন, জাহিদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তার মাথার খুলি ভেঙে গেছে, শরীরে জখম আছে। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, 'আমি আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে হাসপাতালের গিয়েছিলাম। তার অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আশা করছি, সবাই একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাতে পারব।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ভার বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমরা ঘাতক চালকের বিচার নিশ্চিত করব। বাইক, অটোরিকশার গতি নিয়ন্ত্রণে আমি নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশ দেব। ঝুকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবার সহযোগিতা কাম্য।