‘জুবায়ের হত্যাকারীদের পাখি মারার শাস্তি দেয় জাবি প্রশাসন’
‘২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়েরের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদাসীন ছিল তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির প্রশাসন। এজন্য হত্যাকারীদের অতিথি পাখি মারার শাস্তি দিয়েছিল তারা।’ সোমবার (০৯ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন দর্শন বিভাগের প্রফেসর রায়হান রাইন।
রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা জুবায়ের হত্যার বিচার চেয়ে ৮ দাবিতে আন্দোলন করলে শরীফ এনামুল কবির দাড়িয়ে থেকে ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। এই ছাত্ররা ভিসিলীগ হিসেবে পরিচিত ছিল। মাত্র ৬ মাসের বহিষ্কারাদেশ দিয়ে হত্যাকারীদের দেশছাড়ার সুযোগ করে দেয় তৎকালীন প্রশাসন। ফলে ১১ বছরেও জুবায়ের হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হয়নি। এটা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। শাসকদের সদিচ্ছার অভাবের কারণে এখনো আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা বিদেশে সুখে আছে। মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানোর ফেসবুকে পোস্ট করে তারা।’
সভায় সাবেক উপাচার্য ও বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে রায়হান রাইন বলেন, ‘শরীফ তার আমলে দুইশত শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন যারা কম যোগ্য, এরমধ্যে ১২০ জন শিক্ষক একেবারেই কর্মযোগ্যতা রাখতেন। যখন আন্দোলন চলে তখন তিনি এই দুইশো শিক্ষকের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন।
শরীফ এনামুল কবির কর্মচারী নিয়োগেও আড়াই লক্ষ টাকা করে নিতেন বলে অভিযোগ করেন রায়হান রাইন। তিনি বলেন, ‘শরীফ এনামুল এতোই বেপরোয়া ছিলেন যে তার বাসাতেও নিয়োগ বোর্ড বসাতেন। একদিন বাসায় নিয়োগ বোর্ড বসানোর কারণে আমরা তার বাসা ঘেরাও করেছিলাম। কিন্তু এরপরও তার বাসার পিছনের লেকে নৌকায় করে প্রার্থী এনে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পরে তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।’
অভিযুক্ত অপর ছয় শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, দর্শন বিভাগের অরূপ ও কামরুজ্জামান সোহাগ, প্রাণ রসায়ন বিভাগের নাজমুস সাকিব তপু, পরিসংখ্যান বিভাগের অভিনন্দন কুণ্ডু ও সফিউল আলম সেতু এবং ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম। এদের মধ্যে সোহাগ, মাজহারুল, সেতু, কুণ্ডু ও তপু আদালতে রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন।
পরবর্তীতে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ঢাকার আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলে প্রেরণের নির্দেশ দিলে আশিক, আকরাম, অরূপ ও সোহান কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন তারা। অভিযুক্তদের মধ্যে রাজু ও জাহিদ সেদিন আদালতে হাজির হননি। রাজু পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করলেও জাহিদ পলাতক রয়েছেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা চাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটা শিক্ষাঙ্গনে আর কোন ছাত্রের প্রাণ যাক। প্রশাসন চাইলে আসামিদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে পারে। অথচ দুজন আসামী ছাড়া বাকিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি বাস্তবায়ন করার কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে ছাত্রলীগ নেতা ও ইংরেজি বিভাগের ৩৭ ব্যাচের ছাত্র জুবায়ের আহমেদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। এই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১ জন ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ১ জন ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত বাকি পাঁচ জনই ধরাছোঁয়ার বাইরে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
জুবায়ের হত্যা মামলায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ বিচার কাজ চলার পর ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দর্শন বিভাগের রাশিদুল ইসলাম রাজু; প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আশিক, সোহান, জাহিদ এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আকরামকে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির রায় দেয় আদালত। এদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম আপিল করেন, অপর চার আসামি পলাতক রয়েছে।