০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫৬

ঢাবিতে যত্রতত্র মুত্রত্যাগ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিলে এভাবেই বসে যান ফুটপাথে  © টিডিসি ফটো

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতিদিনই হাজারো মানুষের কোলাহল আর পদভারে মুখরিত থাকে। কিন্তু এত জনবহুল জায়গায় আবাসিক হল ও প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবন ব্যতীত নেই কোনো আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা। অন্যদিকে নেই মোবাইল টয়লেটের (ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার) ব্যবস্থাও। ফলে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসে প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিলে বসে যান ফুটপাথেই। এতে নষ্ট হয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ, এমনকি থাকে না নির্বিঘ্নে হাটার পরিবেশও। 

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ফুলার রোড, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, পলাশী থেকে সলিমুল্লাহ হলের সামনে রাস্তা, জগন্নাথ হলের পেছনের রাস্তা, শামসুন নাহার হলের সামনের দিকসহ বেশ কিছু জায়গায় যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করেন বহিরাগতরা। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের এসব জায়গায় মল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতেও দেখা যায়।

আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন ব্যতীত কোনো মোবাইল টয়লেট না থাকায় ক্যাম্পাসের রিক্সা চালক, স্থায়ী অস্থায়ী দোকানদার, হকার, বহিরাগতরাও এসব জায়গায় মূত্র ত্যাগ করে। ফলে এসব ফুটপাথে হাটা অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে, দূষিত হচ্ছে ঢাবি ক্যাম্পাস। দেয়াল ঘেঁষে মুত্র ত্যাগের ফলে মূত্র পুরো ফুটপাথে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাটতে বেগ পেতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গণ-শৌচাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল গতকাল রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর গণ-শৌচাগার স্থাপনের জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তিন শিক্ষার্থী৷ এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেওয়াল ও মূত্রত্যাগের জায়গাগুলোতে অভিনব পোস্টারিং করা হয়েছে। যে দেওয়ালে মানুষ প্রস্রাব করে সেখানে ‘আমি কুকুর, আমি রাস্তায় প্রস্রাব করি’ লিখা লিফলেট টানিয়ে দিয়েছে তারা।


 

লিখিত আবেদনপত্রে বলা হয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণ-শৌচাগারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এর ফলে বহিরাগত ও রিকশাচালকেরা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অবর্ণনীয়ভাবে নষ্ট করে ফেলছেন। রাস্তায় যানজট আর ফুটপাতে প্রস্রাবের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা করা একেবারেই দুরূহ হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গণ-শৌচাগার স্থাপন করা গেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।

২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তারিক বলেন, ঢাবির পরিবেশ এত খারাপ এটা বাইরের কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, এটা ঘটছে। কোনো শিক্ষার্থী এসব কাজ করে না, বহিরাগত আর রিক্সা চালকরা এসব করে। আমরা ফুটপাথ ধরে হাঁটতে পারি না। শরীর বাঁচাতে ফুটপাথ এড়িয়ে আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটি। প্রশাসনের উচিত বহিরাগতদের নিষিদ্ধ করা এবং বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল টয়লেট স্থাপন করা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রসিদ বলেন, ঢাবিতে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ দিনেদিনে মহামারীর আকার ধারণ করেছে।বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোর পাশে এই অবস্থা শোচনীয়। ক্যাম্পাসের মধ্যকার রিক্সা গ্যারেজের পাশে একটি অস্থায়ী মূত্রত্যাগের জায়গা গড়ে উঠেছে অথচ প্রশাসনের কোনোপ্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই।প্রোক্টরিয়াল টিমের চোখের সামনে এসব চললেও তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। যতদ্রুত সম্ভব প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি গণ শৌচাগার করা হয়েছিলো। কিন্তু তাতে উপকারের চেয়ে অপকার হয়েছে। কেউ যথাযথ ব্যবহার না করায় জগন্নাথ হলের পাশে ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের দুইটি রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গিয়েছিলো। এখন প্রশাসন শতবর্ষের পরিকল্পনায় এসব নিরসনে কাজ করছে। এসব জায়গায় যেনো কেউ প্রাকৃতিক কাজ না সারে সে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে। জায়গাগুলো পরিষ্কার করে চলার উপযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।