একজনও বিদেশি শিক্ষার্থী পায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপাতও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক পর্যায়ে ৩৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোটায়। বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক শাখার তথ্য মতে, ২০২২ সালে ভারত থেকে একজন শিক্ষার্থী আবেদন করলেও পরে ভর্তি হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী শূণ্যের কোঠায় নেমে আসার কারণ হিসেবে বাংলায় পাঠদান, ভাষাগত দক্ষতা যাচাই, কোর্স না করানো, আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমের অনুপস্থিতি, বই-নোটসহ বেশিরভাগ শিক্ষা উপকরণ বাংলায় থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমির শাখা সূত্রে জানা যায়, সর্বপ্রথম ২০১৪-১৫ সেশনে মাত্র দুইজন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন শুরু হয়। এর আগে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন এমন তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ সেশনে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিনজনে। এরপর ২০১৭ সালে জর্দান, সোমালিয়া ও নেপাল থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
২০১৮ সালে নেপাল ও জর্দান থেকে আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে সময়ের ব্যবধানে মাত্র একজন ছাড়া টিকতে পারেননি কেউ। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি একসঙ্গে পাঁচজন নেপালি শিক্ষার্থী গোপনে দেশ ছাড়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে বছর না পেরোতেই চলে যান জর্দানের শিক্ষার্থী রাদ ইব্রাহিম খলিল আবুশায়ুন।
এরপর ২০১৯-২০ সেশনে চারজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ২০২০-২১ সেশনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়ে। সে বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে অন্তরা হালদার নামে মাত্র একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পরে আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হননি প্রাচ্যের ক্যাম্ব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিদেশি শিক্ষার্থীর ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই তার সার্বজনীনতা ধরে রাখতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা আন্তর্জাতিক। এমনকি আমেরিকান অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের চেয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীর দরকার অনেক বেশি। যদি একটি দেশের বা এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তার সার্বজনীন চেহারা ধারণ করতে পারে না।
তবে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের মান বিবেচনায় রাখার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যায় তারা মোটামুটি সবাই-ই ক্লাসের ভালো ছাত্র। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থী দরকার কিন্তু ভর্তির সময় কোন মানের শিক্ষার্থী নিচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। আমরা চেষ্টা করছি এ জায়গাটা ঠিক করার জন্য। কিছুদিন আগে আমাদের যে ব্রুশিয়ারগুলো বানানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেক ভুল থেকে গেছে। এ ব্রুশিয়ারগুলো যদি আমরা সুন্দরভাবে করতে পারি তাহলে এগুলো বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পাঠাবো। তখন তারাও আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে। আমরা যে অভাব বোধ করছি সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বিদেশি ছাত্রদেরকে রাখতে গেলে শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আহবান করলে চলে আসবে বিষয়টি পুরোপুরি তা নয়। বিদেশি যে দূতাবাসগুলো আছে তারা যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলে এ জায়গাটা পূরণ হওয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে সব বিভাগকে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ওভাবে এখনো গড়ে ওঠেনি। আমরা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরকেই যথেষ্ট পরিমাণে স্কলারশিপ দিতে পারছি না। তারপরও আমরা বিদেশীদের জন্য কিছু স্কলারশিপ চালু করেছি।