২০ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:১৬

রাবির এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার এখন নিষ্প্রাণ স্থাপত্য

সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অস্তিত্বের প্রতীক সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার আজ বিবর্ণ হয়ে নিষ্প্রাণ কাঠামো অবস্থায় পড়ে আছে। যত্ন আর অবহেলায় চাকচিক্য ও জৌলুশ হারাতে বসেছে টাওয়ারটি। অযত্ন ও উপেক্ষার ফলে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে দৃষ্টিনন্দন হারাচ্ছে স্থাপনাটি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যত্ন না নেওয়ার ফলে সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ারের ম্যুরালটিতে মরিচা ধরেছে। অনেকদিন থেকে রংয়ের স্পর্শ না পাওয়ায় সোনালী রংয়ের টাওয়ারটির সাদা এবং কালো রংয়ে পরিণত হয়েছে। জং ধরে খসে পড়ছে ম্যুরালের বিভিন্ন অংশ। ম্যুরালের বেদীতে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ।

আরও পড়ুন: জবির বিএড ও এমএড কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ 

বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও উৎসবে বর্ণিল সাজে মেতে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু সাজ পায়না দর্শকখ্যাত এই সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার। ফলে দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও। কিন্তু কেন সাজ পাচ্ছে এ টাওয়ারটি এ নিয়ে প্রশ্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিকে স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০০৩ সালে নির্মাণ করা হয় এই সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার। রাজশাহীর প্রথিতযশা ভাস্কর মৃণাল হকের সুনিপুণ কারুকার্যে তৈরি হয় এই নান্দনিক স্থাপনাটি। স্টিলের তৈরি ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। নির্মাণকৃত বছরের ২১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া টাওয়ারটির শুভ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ থাকায় এটাকে সজ্জিত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ারটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার প্রতীক। যে শিল্পী এটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এ টাওয়ারটি সংস্কার করা খুবই জরুরী। দলীয় বিষয় টেনে যদি এমনটা কেউ করে তাহলে সেটা তাদের সংকীর্ণতা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিশ্বের সাথে তুলনা করতে হয়ে। এ টাওয়ারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। ফলে দ্রুত সময়ে এর সংস্কার কাজ শুরু করে একে দৃষ্টিনন্দন করা উচিত বলে মনে করছেন এ অধ্যাপক। 

খালেদা জিয়ার নাম থাকায় অবহেলা হচ্ছে এমন বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ারটিকে তৈরি করা হয়েছিলো। টাওয়ারটিকে সংরক্ষণ করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। আমরা অবহেলা করছি সেটা সত্য নয়। করোনার পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ ছিলো শিক্ষা ও গবেষণা খাতকে উন্নত করা। আমরা অনেকটাই নিয়ে আসতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে প্রশাসন। তার মধ্যে পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস, টয়লেট নির্মাণ, সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা সংরক্ষণের কাজ। সামনে সমার্বতন আছে। সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যে আমরা হাতে নিয়েছি তার মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ারের সংস্কারের কাজ আছে বলে জানান তিনি।