সমাবর্তনের সুযোগ পেলে ক্যাম্পাসে বাবা-মার সঙ্গে ছবি তুলে আনন্দ করতাম: আখতার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এখন কালো গাউনের দখলে। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, কার্জন হলসহ প্রায় সবখানে ক্যাপ তুলে ওপরে ছুড়ে মারছেন ৫৩তম সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েটরা। আর তুলছেন ছবি। অনেকে বাবা-মার সঙ্গে ছবি তুলছেন। ক্যাম্পাসের ঐতিহ্যবাহী সব জায়গায় নিজেদের ফ্রেমে বন্দি করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর চার বছর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় গ্র্যাজুয়েশন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি মেলে শিক্ষার্থীদের। সমাবর্তনের মাধ্যমে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয় শিক্ষার্থীরা।
তবে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হােসেন। আইন বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে না পেরে মনের ভেতরে চাপা একটা কষ্ট থেকেই যাচ্ছে তাঁর।
জানা গেছে, চলতি মাসের ৯ তারিখে এক মাস পর কারাবন্দি থেকে মুক্তি পেয়েছেন আখতার। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ৫৩তম সমাবর্তনের আবেদনের সময় শেষ হয়ে যায়। এ কারণে এই সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগটি হারিয়েছেন ডাকসুর সাবেক এই নেতা।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আখতার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চলতি মাসের ৯ তারিখ জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছি। তাই এবার সমাবর্তন নেওয়ার সুযোগ হবে না। কারণ ২৬ অক্টোবর সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশনের ডেডলাইন শেষ হয়ে গেছে। আর তখন আমি জেলে ছিলাম।
“তবে আন-অফিসিয়ালি সমাবর্তন নিচ্ছি। আন-অফিসিয়াললি বলতে বন্ধুদের কাছ থেকে গাউন-টুপি নিয়ে ছবি তুলেছি, সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে তাদের সাথে উঠাবসা হচ্ছে, হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। কিন্তু মনের ভেতরে চাপা একটা কষ্ট থেকেই যাচ্ছে। যেহেতু আমি রেজিষ্ট্রেশন করার সুযোগ পাইনি। তাই ১৯ তারিখের সমাবর্তনে মূল অনুষ্ঠানে জয়েন দিতে পারব না।”
তিনি আরও বলেন, অফিসিয়ালি সমাবর্তনে জয়েন দিতে পারছি না খারাপ লাগতেছে এই কারণে যে, দীর্ঘ সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা সমাবর্তন। সেখানে আমি অফিসিয়াললি জয়েন করতে পারছি না। সেটা আমার জন্য কষ্টকর, আমার পরিবারের জন্য কষ্টকর। আমি যদি অফিসিয়ালি সমাবর্তন নিতে পারতাম তাহলে আমার অভিভাবকদের ঢাকায় নিয়ে আসতাম। তাদের সাথে ক্যাম্পাসে ছবি তোলার সুযোগ হত। তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতাম। যেহেতু আমি আবেদন করার সুযোগ পাইনি। তাই অভিভাবকদের ডাকিনি। তবে পরেরবার অফিসিয়াললি সমাবর্তনে পেলে পরিবারকে ডাকবো।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর বিকেলে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে মেডিকেল থেকে আখতারসহ পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ।
পরে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের নামে দুটি মামলা করেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন সকালে ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতাকর্মীকে আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানার পুলিশ। এই দুই মামলায় গ্রেপ্তারের এক মাস পর গত ৭ নভেম্বর তাদের জামিনের আদেশ দেন ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। এরপর ৯ তারিখে কারাবন্দি থেকে মুক্তি পান আখতার।