১৭ নভেম্বর ২০২২, ০১:০৩

ছাত্রী আন্দোলনে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রী আন্দোলনে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নবনির্মিত আবাসিক হলে শতভাগ স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রীরা। প্রাধিকার ভিত্তিতে নবনির্মিত হলে এই হলের ছাত্রীদের শতভাগ স্থানান্তর না করে প্রতিটি হল থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী নেওয়ার প্রতিবাদ জানান তারা।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত ৭টার দিকে হলগেটের বাইরে এ দাবিতে শ্লোগান দেয় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ও প্রভোস্ট অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন। পরে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি জানান তারা।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের (ফজিলাতুন্নেসা হল) সকলের আবাসন স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে; প্রথম উদ্বোধনকৃত হলের নাম ‘ফজিলাতুন্নেসা’ করা; ফজিলাতুন্নেসা হলের সকল ছাত্রীদের আবাসন নিশ্চিত করে তারপর অন্য হল থেকে ছাত্রী নেওয়া; অবশ্যই ফজিলাতুন্নেসা হলের ৬ শতাধিক ছাত্রীর একসাথে নতুন (প্রথম) হলে স্থানান্তর করতে হবে ও উপরোক্ত দাবি সমূহের ভিত্তিতে আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।

ফজিলাতুন্নেছা হলের ৪৪ ব্যাচের ছাত্রী মুমু বলেন, প্রতিটি হল থেকে ১০০ জন করে নতুন হলে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে আমাদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। কেনানা গত দুই বছর থেকে প্রতিশ্রুতি শুনছি আমাদের দুর্ভোগকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বপ্রথম এই হলের ছাত্রীদের নতুন হলে উঠানো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক হল থেকে ছাত্রী নেওয়া হবে। যা আমাদের সাথে প্রতারণা হয়েছে।

৪৯ ব্যাচের ছাত্রী তানজিনা তাবাসসুম তন্দ্রা বলেন, নতুন হলে উঠানোর কথা বলে এখানে কোন ধরনের সংস্কার কাজ হয় না দুই বছর ধরে। এখানকার ওয়াশরুম গুলো ব্যবহারের অযোগ্য, রিডিং রুম-ডাইনিং রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তাছাড়া স্যাতস্যতে পরিবেশ, বৃষ্টিতে পানির ছিটার কারণে এখানে থাকা আমাদের পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ইনডেক্সধারীদের আবেদনের সুযোগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় এনটিআরসিএ

৪৮ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের মনি নাসরীন বলেন, আমাদের অনেকেই চতুর্থ বর্ষে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এই অমানবিক পরিবেশ আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে এখানে এসেছি। তাদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের যে সিদ্ধান্ত এটা উপাচার্য কোনো একক সিদ্ধান্ত নেয়নি, প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে গেলে পুনরায় প্রভোস্ট কমিটির সভায় তা করতে হবে। এটুকু সময় তো আমাদের দিতে হবে।

তিনি বলেন, এখন আমাদেরকে হয় নতুন হল উদ্বোধন পেছাতে হবে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি সব হল উদ্বোধনের জন্য দেরি করতে হয় তবে গণরুমের মধ্য দিয়েই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতে হবে। আমরা গণরুম কখনোই চাই না।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা প্রভোস্ট কমিটির সভায় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সমস্যার ভুক্তভোগী সেই একই সমস্যায় একটু কম হলেও অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও ভুক্তভোগী বলে জানিয়েছেন প্রভোস্টগণ। আসলে প্রত্যোকটি হলে গণরুম বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে গেলেও পুনরায় মিটিং করতে হবে। মিটিং হলে শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা হবে।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল হলে নবনির্মিত ২টি হলের সিটবন্টনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে হল সমূহের প্রভোস্টগণ অংশ নেন।

এতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিটি হলের ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষার্ষের ১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানান্তরকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা শাখায় জমা দিতে বলা হয়েছে।