চবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করায় ডিনকে শোকজ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৭ পদের আট পদই শূন্য। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়ায় ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষকসহ ছয়টি পদই শূন্য। এবিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যায়লয়ের আইনের শাসনের পরিপন্থী বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়াও সিন্ডিকেটে নেই সিনেট মনোনীত বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদ। সিন্ডিকেটের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থ, সুশাসন এবং আইনের শাসনের জন্য হুমকি। ৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এসব বিষয় নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীর।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও। সিন্ডিকেটের পদগুলোতে নির্বাচন দিলে নিজের পছন্দসই মানুষকে সিন্ডিকেটে তারা বসাতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশাসন সন্দিহান বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই নিজেদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাধা আসতে পারে বলে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: প্রোগ্রামিং বিশ্বকাপে সবার উপরে এমআইটি, দেশসেরা বুয়েট ৪০তম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর হয়। এই সিন্ডিকেটে পদাধিকার বলে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। সদস্য সচিব থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। উপ-উপাচার্যও পদাধিকার বলে সদস্য হিসেবে সিন্ডিকেটে থাকেন।
৩ নভেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যমে প্রশাসনকে দুর্নীতির সাথে জড়িত বলেন ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। এবিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ ইতোমধ্যে মিডিয়া গত এক বছরে পরিবেশন করেছে। ভাবছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে ব্যবস্থা করে গ্রহণ করে আইনের শাসন নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হবে। কিন্তু দেখছি প্রশাসন আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের পদশূন্য রেখে এক পেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ বারবার প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে কি আইনের শাসনের ব্যতয় ঘটেনি?
তিনি আরও বলেন, উপাচার্য পরিবর্তন আমার লক্ষ্য নয়, উপাচার্যকে আইনের শাসনে দায়বদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করতে উপাচার্যকে আইনের শাসনে অভ্যস্ত করতে সহযোগিতা করতে চাই। আইনের শাসনের প্রতি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে প্রতিপক্ষ ভাবলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুখকর হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সুস্পষ্টভাবে সকল মতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসন কাঠামো পরিচালিত হবে। কিন্তু সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যদের দিয়ে সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে, নেই কোনো শিক্ষক নির্বাচিত প্রতিনিধি। এটি সুশাসনের অন্তরায়, এটি আইনের শাসনের অন্তরায়। যা বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি নীলনকশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া উপাচার্যের পক্ষে বলেন, আমরা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নিয়ে পরিকল্পনা করছি। এবিষয়ে সভা আয়োজন করা হয়েছে। ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী এজেন্ডা বহির্ভূত আলোচনা নিয়ে এসেছেন। তিনি প্রশাসনকে ঢালাওভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দিতে পারেন না। আমরা শোকজ চিঠি দিয়েছি৷ তার জবাব পেলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের শূন্য পদগুলোর নির্বাচন নিয়েও প্রশাসন কাজ করছে।