২৭ অক্টোবর ২০২২, ২৩:২১

রাকসু না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজের সুযোগ পাচ্ছে প্রশাসন

সংবাদ সম্মেলন  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) না থাকায় ৩২ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার কোনো জায়গা নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরী হচ্ছে না যোগ্য নেতৃত্ব। এই সুযোগে একের পর এক শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-বিরোধী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেই চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের নেতারা। তারা বলছেন,  অতিরিক্ত ফি আদায়, পোষ্য কোটা রেখে মেধাবীদের বঞ্চিত এবং আবাসিক হলে নির্যাতিত ও হয়রানিসহ নানা ভাবে অধিকার বঞ্চিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ সেবাদাসে পরিণত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, রাকসু নেতা তৈরির কারখানা। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের যতো সোনালি অর্জন, সবই সম্ভব হয়েছিল ছাত্র সংসদের কারণে। কিন্তু দীর্ঘদিন তা বন্ধ থাকায় জাতীয় রাজনীতিতে বাড়ছে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের সংকট। ফলে রাজনীতিতে জায়গা দখল করেছেন মুনাফালোভী অসৎ ব্যবসায়ীরা। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান।

‘‘অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে রূপ নিয়েছে দেশ। রাকসু না থাকায় সহজেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-বিরোধী কর্মকাণ্ডের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট কমছে, ফলে ব্যয় বাড়ছে। সেই ব্যয়ের ভার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। এমনকি বছর বছর নামে-বেনামে আদায় করা হচ্ছে অযৌক্তিক ফি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাড়ছে ভোগান্তি।’’

আরও পড়ুন: সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিংয়ে প্রশিক্ষিত দুজন শিক্ষক দরকার: শিক্ষামন্ত্রী

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলে সিট দখল, সিট বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত নেতারা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন তা কর্ণপাত না করে উল্টো হুমকি-ধামকি ও দমন-পীড়ন চালিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু রাকসু থাকলে তা সম্ভব হতো না। তাই অবিলম্বে রাকসু নির্বাচন না দিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।

এসময় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিশ্চিত করে পূর্ণাঙ্গভাবে সিনেট কার্যকর করাসহ ১৪-দফা দাবি জানানো হয়।

অন্য দাবিগুলো হলো- আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হল নির্মাণ, মেধার ভিত্তিতে বৈধ প্রক্রিয়ায় সিট বরাদ্দ ও হলে সিট সংক্রান্ত বিষয়াবলি অনলাইনে হালনাগাদ করা; আবাসিক হলে সকল ধরনের রাজনৈতিক ব্লকের নামে দখলদারিত্ব নিষিদ্ধ করা; প্রতিটি আবাসিক হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খাবারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা ও খাবারের মূল্য কমিয়ে পর্যাপ্ত ভর্তুকীর ব্যবস্থা করা; কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে ৭ দিন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা ও সংকট দূর করা; যাতায়াতের জন্য রুট বৃদ্ধিসহ পরিবহন দপ্তরে পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করা;

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অবস্থান ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট বৃদ্ধি ও গবেষণা সহকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা; পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি নির্মাণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বেনামে আদায়কৃত সকল ধরনের অযৌক্তিক ফি বাতিল ও সকল সনদ প্রাপ্তি অনলাইনের আওতায় আনা; ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; ক্যাম্পাসে সান্ধ্য আইন, সান্ধ্য কোর্স, চুরি, যৌন হয়রানি বন্ধ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চলমান পোষ্য কোটা বাতিল করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বর এর পরিবর্তে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু করে মূল্যায়ন করা।