সক্রিয় পরিচালনা পর্ষদ চায় রাবি অধিভূক্ত বায়োসায়েন্স ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সক্রিয় পরিচালনা পর্ষদসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (০৪ অক্টবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাবি প্রশাসনের নিকট এসব দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি থেকে ইনস্টিটিউটকে রক্ষা করতে হবে; ইনস্টিটিউটের স্থায়ী ক্যাম্পাস, স্বাভাবিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; ল্যাব, লাইব্রেরীর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্য ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে; ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাহায্য করতে হবে; সেমিস্টার ফি নিয়ে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: কৃষিগুচ্ছের ভর্তি ফি ১০ হাজার, সময়মতো না দিলে আসন বাতিল
দাবি জানানোর পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান শারুল বলেন, আমরা ভর্তি হওয়ার শুরুতে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ আমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভর্তি হতে উৎসাহিত করে। তারা আমাদের সামনে বায়োসায়েন্স ইনস্টিটিউটকে রাবির আইবিএ’র মতোই একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে উপস্থাপন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ব্যতীত সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে আমাদের ভর্তি কার্যক্রম এবং ভাইভা রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত বর্তমানে আলো আশা স্কুল নামে পরিচিত একটি ভবনে নেওয়া হলেও ক্লাস শুরু হয় ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিপরীত পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের এমন প্রতারণাপূর্ণ আচরণ আমাদের সামনে দৃশ্যমান হলে আমরা প্রতিবাদ করি। এর প্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বলে রাবির কৃষি অনুষদ ভবনের পাশে একটা জায়গা কেনা হয়েছে এবং যেখান ভবন নির্মাণকাজ শেষ করে ইনস্টিটিউটকে স্থায়ীভাবে সেখানে স্থানান্তর করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ল্যাব ও ক্লাসের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতি, পর্যাপ্ত শিক্ষকের সংকট রয়েছে।
শারুল বলেন, আমাদের ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন রাবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মনজুর হোসেন, ড. এফএম আলী হায়দার, বর্তমান ইনস্টিটিউট প্রিন্সিপাল ড. হাফিজুর রহমান এবং রাবির সাবেক উপাচার্যের পুত্র মুশফিক সোবহান। এদের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদে থাকা ড. এফএম আলী হায়দার এবং ড. হাফিজুর রহমান ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের কয়েকমাসের বেতন বাকি রাখা, নিয়োগপত্র আটকে রাখা, ভবনের ভাড়া বাকি রাখা, দক্ষ ও যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও ঘনিষ্ঠদের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়াসহ নানা ধরণের অনিয়ম-দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের উদ্ধতপূর্ণ আচরণ আমাদের শঙ্কিত করে। আমাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা ইনস্টিটিউটের তিনশত শিক্ষার্থী শঙ্কিত। আমরা পরিচয় সংকটে ভুগছি। আমাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের কাছে গেলেও উনারা আমাদের সঙ্গে ছলচাতুরীপূর্ণ আচরণ করেন। এমতাবস্থায় আমরা রাবি প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটটির অন্তত ২০জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে ইনস্টিটিউট প্রিন্সিপাল ড. হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও রাবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এফএম আলী হায়দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। সেই ধারাবাহিকতায় রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান থাকাকালীন নবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি বিদায় নেয়ার পর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম কোন অভিযোগ ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি বন্ধ করে দেন। ফলে এক বছর আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারিনি।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি বিভাগে ৩-৪ জন করে শিক্ষক আছেন। তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। এমনকি যে বাড়িতে শিক্ষা-কার্যক্রম চলছে সেখানেও কোন ভাড়া বাকি নেই বলে জানান তিনি।
অধিভুক্তি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হতে হলে যেসব নিয়মনীতি রয়েছে তা পালন করতে হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান সেসব নিয়মনীতি পুরপুরি পালন না করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি সাময়িক বন্ধ করা হয়।
উপ-উপাচার্য বলেন, যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত, তাই আমাদের প্রত্যাশা এই প্রতিষ্ঠান সকল নিয়মনীতি মেনে চলুক। এছাড়া শিক্ষা-কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যথাযথ সুযোগ সুবিধা পাক।