শিক্ষা দিবসের সমাবেশে শিক্ষার পরিবেশ বিভ্রাট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আয়োজিত সমাবেশের জন্য শব্দদূষণের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশে শুরু হয় এবং যা শেষ হয় দুপুর ২টায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমাবেশের জন্য ক্লাসের সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। ওই সময় ঢাবির কলাভবন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাস হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পরীক্ষা হচ্ছিল বলে জানা যায়। অনুষদগুলোর শিক্ষার্থীরা শব্দদূষণের ফলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিল না। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ঢাবির গ্রন্থাগারে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদেরকে খুবই বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সংগঠনটি মাইক স্থাপন করে। বিশেষ করে কলাভবনের সামনেই ছয়টি মাইক স্থাপন করতে দেখা যায়। এছাড়াও সংগঠনটি ক্যাম্পাসে অন্য পয়েন্টগুলোতে মাইক স্থাপন করেছিল। এ মাইকগুওলো শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালীন পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা আলোচনার জন্ম দেয়। কেউ কেউ আবার প্রশাসনকে দায়ী করছে। বলা হচ্ছে, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস চলাকালীন সমাবেশের অনুমতি দেয়? তাও আবার অপরাজেয় বাংলার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
এ নিয়ে মারুফ হাসান নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, আজকে তো ক্যাম্পাসের অফ ডে না। কলাভবন, আইএমএল, স্যোসাল সাইন্স সব ফ্যাকাল্টিতেই ক্লাস হচ্ছে। এই যে ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা পয়েন্টে পয়েন্টে মাইক বসায়ে শব্দ দূষণ করছেন, ক্লাসে মনোযোগ দেওয়াতে ডিসট্রাক্ট করছেন এই বোধটুকু আপনাদের মগজে আসতেছে না। যে অন্যের ক্ষতি হচ্ছে এগুলাতে? নাকি এইটাই আপনাদের বিপ্লব? এইটা তো একটা ইউনিভার্সিটি নাকি? Feels like DU is a part time University, full time party office.
ঢাবির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান শান্ত জানান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সংগঠনটি ক্লাস চলাকালীন সময়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে তাদের প্রোগ্রাম করে। উচ্চ শব্দের জন্য ক্লাসে আমরা স্যারের লেকচার শুনতে পাইনি। কেউ কিছু বলার নেই। একটা ছাত্র সংগঠন হিসেবে কিভাবে এই কাজ করতে পারে?
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম খান জানান, মাইকের অতিরিক্ত সাউন্ডের জন্য আমাদের ক্লাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। প্রশাসনের উচিত ক্লাস চলাকালীন সময়ে কলাভবন বা বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির আশেপাশে কোন মিছিল মিটিংয়ে আয়োজনের অনুমতি না দেওয়া এবং এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।
এ নিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, এই সংগঠনই আবার শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে আসবে কয়দিন পরে।অথচ কলাভবনে সব জানালা বন্ধ থাকার পরেও সাউন্ড কান পর্যন্ত পৌছাইছে।
আরেক শিক্ষার্থী মোঃ হাদিউজ্জামান ফেসবুকে লিখেন, আচ্ছা কলাভবনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় মাইক বাজাতে হলে কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া লাগেনা? কী আজব এক প্রশাসন আমাদের! ক্লাস, পরীক্ষা সবই চলছে। তার মধ্যে মহাসমাবেশে মাইক বাজিয়ে পুরো এলাকাকে অস্থির করে তুলেছে। দেখার কেউ নাই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান,
প্রথমত, অধিকাংশ সংগঠনই কোনো অনুমোদন গ্রহণ করে না। দ্বিতীয়ত, অনুমোদন দেওয়া হোক বা না হোক। এটা তো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেকোনোই অনুষ্ঠান শিক্ষা বান্ধব হওয়া উচিত। এবিষয়টি মেনে নিয়ে যদি আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াই। তাহলেই এ অবস্থা থেকে দ্রুত অবসান করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, যারা রাজনীতিটা করেন তারা নিশ্চয়ই দেশের কল্যাণের জন্যে করেন। সবাই যদি ঐক্য মতে আসেন তাহলেই এটি রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব। এগুলো বাধা দিয়ে অথবা নিষেধ করার চাইতে নিজ দায়িত্বে যদি আমরা করি তাহলে এটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং এটি দ্বারা সবাই উপকৃত হবে। বিশেষ করে যে সংগঠনগুলো এমন শিক্ষার্থীদের কথা ভাববে তাদের গ্রহণযোগ্য অনেক বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান জানান, প্রথম কথা হচ্ছে পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন হিসেবে এরকমটা হয়। আগেও এমনটা করে এসেছি। ওয়ার্কিং ডে'তে না করে ছুটির দিনে করলে ক্যাম্পাসে প্রভাবটা সেভাবে থাকে না। সেজন্যে কোনো প্রোগ্রাম করলে আমরা ওয়ার্কিং ডে'তে করে থাকি।
তিনি আরও জানান, শব্দ দূষণের কথা যেটা বলছেন। সেটা সামনে দিনে গুলোতে প্রোগ্রাম করলে আমরা বিবেচনায় রাখব।