অনশনে নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন ঢাবির সেই শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক জটিলতায় সৃষ্ট নানা রকম হয়রানি বন্ধ ও ৮ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসে প্রথমদিনেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অনশন শুরু করেন তিনি।
হাসনাতের সাথে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী হাসিব আল আমিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বলেন, তার শারীরিক অবস্থা একদমই ভালো না। তিনি এমনিতেই বেশ কিছু রোগে ভুগছেন, বিশেষ করে কিডনি এবং ইউরেন ইনফেকশন আছে। আমরণ অনশন বিষয়টা সত্যিই তার জন্য কষ্টদায়ক। এখন তিনি একদমই ক্লান্ত, নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। শুয়ে পড়েছেন, উঠতেও পারছেন না। ঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ দেখা করতে আসেনি। হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাইয়ের কিছু হলে তার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
হাসনাতের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও তার সাথে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
হাসনাত বলেন, ভিসি স্যারের অসহযোগিতামূলক আচরণের প্রতিবাদে ও আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমি আমরণ অনশন করছি। আমি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছি। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই। কিডনিতে আগে থেকে সমস্যা হওয়ায় বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাব।
হাসনাত আরও বলেন, ৮ ঘণ্টা অনশন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া পাইনি। ভিসি স্যার যদি এ দাবি পূরণের কোনো উদ্যোগ নেয়, সময় বেধে দেয়, কোনো কমিটি গঠন করে দেয় তাহলে আমি যেকোনো সময় অনশন ভেঙে এখান থেকে চলে যেতে রাজি। তবে যেভাবে হোক এই অনিয়মের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। যতদিন না এই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বন্ধ না হবে ততদিন আমার এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে সন্ধ্যা হাসনাতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে হাসনাতের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে আট দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন হাসনাত। সেসময় তিনি উপাচার্যকে স্মারকলিপি এবং দাবি পূরণে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তিনি।
হাসনাতের ৮ দফা
১। শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
২। প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।
৩। নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসগুলোর অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪। প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিসগুলোর নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শন করতে হবে।
৫। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে।
৭। অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবগুলোতে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।