ঢাবিতে বঙ্গবন্ধুকে ডিগ্রি দেয়ার বিশেষ সমাবর্তন আগামী বছর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাক্তন ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০২০ সালে এক বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর-অব-লজ ডিগ্রি (মরোণোত্তর) প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে তা আর হয়নি। আগামী নভেম্বরে ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তনের পর ২০২৩ সালের শুরুর দিকে সেই বিশেষ সমাবর্তন আয়োজন করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে ১৯৪৯ সালে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। আইন বিভাগের তখনকার দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব ৬১ বছর পর ২০১০ সালে ফিরিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: মুখ দেখা ছাড়া ছাত্রীর ভাইভা নেননি ঢাবি শিক্ষকরা
ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে ঘোষণার দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও মহামারি করোনার কারণে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারেনি।
এদিকে আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল।
ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তন ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে মরণোত্তর ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশের অভিযোগ, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে যে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল মহামারি করোনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে বিশেষ সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষিত বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান জরুরি বলে তারা মনে করেন।
ঢাবির সিনেট সদস্য ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সমাবর্তন শতবর্ষেই দেওয়ার কথা ছিল। আমরা করোনার কারণে দিতে পারিনি। আমি মনে করি, আগে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সমাবর্তনটা আয়োজন করে সাধারণ সমাবর্তনে যাওয়া উচিত। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটেও কথা বলেছি। আমার মূল কথা হলো- যেটার সিদ্ধান্ত আগে হয়েছে সেটার আয়োজন আগে করা উচিত। সাধারণ সমাবর্তন আমাদের যে দরকার না সেটা বলছি না। সাধারণ সমাবর্তনও করতে হবে। তবে আগে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া বিশেষ সমাবর্তনটা করা উচিত ছিল।
ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যেহেতু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ সমাবর্তন তাই বিশেষ বক্তা লাগবে, বিশেষ ব্যবস্থাপনা লাগবে। এটা নির্ভর করবে যখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুজনকে একই সাথে পাব। করোনা পরিস্থিতির জন্য সবকিছুতেই পিছিয়ে গেলাম। এখন করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। নভেম্বরের সাধারণ সমাবর্তনের পর যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ সমাবর্তনটিও আয়োজন করা হবে।
রেজিস্ট্রার অফিসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সাধারণ সমাবর্তনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষ সমাবর্তনের বক্তা নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল নেওয়ার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টি একটি ফরম্যাটে আসলে নতুন করে ঘোষণা দেওয়া হবে।