ফুলার রোডে নিয়ম করে চলে বাইক রেস-স্ট্যান্ট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফুলার রোডে সন্ধ্যা হতে না হতেই বাইক স্ট্যান্ট ও বেপরোয়াভাবে বাইক রেসিং করতে দেখা যায়। যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন ফুলার রোডে বসবাসরত আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা নিজেদেরকে অনিরাপদবোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
তারা জানান, দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী মিলনমেলা বসে এ ফুলার রোডে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ভিসি চত্বরসহ এ ফুলার রোডে এক টুকরো স্বস্তির খোঁজ করেন সবাই। কোনো আনমনে ছেলে তার বেসুরো গলায় গান ধরে, পাশের বন্ধুটির গিটার তাকে সঙ্গ দেয়। নিয়মিত চলে অবসরের এই আড্ডা। এরই মধ্যে বেপরোয়া বাইক রেসিং ও স্ট্যান্ট স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যার পরপরই ভিসি চত্বর থেকে শুরু করে ফুলার রোডে সাধারণ বাইক রাইডাররা আসতে শুরু করে। এদের বেশিরভাগই রয়েছেন যারা ঢাবির শিক্ষার্থী নন। মূলত রাত নয়টার পর আসে বাইক স্ট্যান্ট রাইডাররা। তারা উচ্চ শব্দে হর্ণ, বেপরোয়া গতিতে রেসিং ও স্ট্যান্ট করে।
প্রায় সময় দেখা যায় প্রক্টরিয়াল টিম এসে মাইকিং করে। কিন্তু তাদের কথা তেমন কর্ণপাত করে না। প্রক্টরিয়াল টিমও তেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। তারা শুধু মাইকিংয়ে সীমাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার স্বার্থে বাইক স্ট্যান্ট রাইডারদের থামাতে যায়। তখন বাইক স্ট্যান্ট রাইডার বাইক না থামিয়ে উল্টো বেপরোয়াভাবে চালান। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করা হলে কিছুটা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: ঢাবি ক্যাম্পাস যেন টিকটকারদের শুটিং স্পট
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিব আল আবরার জানান, বেপরোয়া গতিতে রেসিং ও স্ট্যান্ট করার ফলে শিক্ষার্থীদের ও আবাসিক ভবনগুলোতে বসবাসরত শিক্ষকদের ফ্যামিলির দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের উচিত এ এলাকা জুড়ে সবসময় নজরদারিতে রাখা। প্রয়োজনে উদয়ন স্কুলের সামনে সিকিউরিটি গার্ডের বুথ স্থাপন করা হোক।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী জানান, যেকোনো সময় অন্য যানবাহনের সাথে সংঘর্ষ হতে পারে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনায় শিকার হতে পারে। তারা এই স্ট্যান্ট ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দেয়। ফলে অন্য স্ট্যান্ট বাইক রাইডারদের ক্যাম্পাসের দিকে আকৃষ্ট করে। এগুলো প্রশাসনের নজরদারি করা উচিত।
তিনি বলেন, যেহেতু ফুলার রোড শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা। তাদেরকেও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় শিক্ষকদের পরিবার নিয়ে বের হলে আলাদা ভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিক্ষকরা এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস জানান, ফুলার রোডে শিক্ষার্থী হাঁটেন, শিক্ষকরা হাঁটেন। ফুলার রোড যখন যখন নতুন করে সংস্কার করা হয়, তখন হাঁটার জন্যই পরিবেশ রাখা হয়েছিল। আমিই প্রায় সময় তাদের দেখলে থামানো চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদেরকে থামানো যায়নি। বাইক স্ট্যান্ট করলে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা ও পুলিশে দেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হোসেন মুহাম্মদ আহসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই এটা দেখতেছি। এটা নিয়ে অনেক অভিযোগ আসছে এবং বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই সিরিয়াস। অতীতেও জিগজাগ স্টিলের ব্যারিকেড দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। সামনে আমাদের আরও পদক্ষেপ রয়েছে। আমরা কন্টিনিউয়াসলি প্রক্টরিয়াল টিম রাখার ব্যবস্থা করবো।