উপাচার্যদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছে ইউজিসি, বরাদ্দ ১৫ লাখ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বিলাসী এক ভ্রমণের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগামী ১৫ ও ১৬ জুন কক্সবাজারের পাঁচতারকা হোটেল ‘রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’তে এই আয়োজন করা হচ্ছে। এতে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং একজন করে কর্মকর্তা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
জানা গেছে, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সই, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইনোভেশন ল্যাব অনুষ্ঠানের নামে এ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সদস্যরা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কক্সবাজার যাবেন। দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এরই মধ্যে এ কাজের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সইয়ের জন্য একটা নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। সারা বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে শুদ্ধাচারের পথ অনুসরণ করবে, তারা যে সেবা দেয় সেগুলো কীভাবে দেবে, এসব নিয়ে তাদের চিন্তা ও উদ্ভাবনগুলো উপাচার্যরা এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরবেন। এপিএ চুক্তিও হবে।
আরও পড়ুন: ইউজিসি কর্মকর্তাদের অস্ট্রেলিয়া সফর স্থগিত
এর আগে গত ২৭ মে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, প্রণয়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা, ২০২২-২৩ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০২২-২৩) স্বাক্ষর ২৫ জুনের মধ্যে করার নির্দেশনা রয়েছে।
এ নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১৫-১৬ জুন কমিশনের সঙ্গে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইনোভেশন ল্যাব কক্সবাজারে অবস্থিত আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত জলতরঙ্গ রেস্ট হাউসে আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠান ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন করে প্রতিনিধি (উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও এপিএ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা), চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ; হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধিসহ (উপাচার্য) (১৩৮+৪) ১৪২ জনকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৫ জুন সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (২০২২-২৩) দুটি কপি বাঁধাই করে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে কমিশনের এপিএ ফোকাল পয়েন্টের কাছে জমা দিতে হবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০২২-২৩) স্বাক্ষর, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইনোভেশন ল্যাবে অংশগ্রহণকারীদের আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থাসহ কর্মশালার সম্মানী ইউজিসি থেকে প্রদান করা হবে। তবে কোনো প্রকার টিএ/ডিএ প্রদান করা হবে না। সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণকারীরা টিএ/ডিএ প্রাপ্য হবেন।
এ ভ্রমণের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, শাখা থেকে ২৩ লাখ বরাদ্দ চেয়ে নথি উপস্থাপন করা হয়েছিল। পরে তা ১৫ লাখে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমি আরও কম বরাদ্দ দিতে চেয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে সব উপাচার্যরা থাকবেন, তাঁদের মর্যাদার দিক তো দেখতে হবে।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও এ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম দস্তগীর বলেন, দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫১টি। এর উপাচার্যরা সবাই অংশ নেবেন। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও এপিএ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন হওয়ায় এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় শুধু উপাচার্যরা থাকবেন। সর্বমোট ১৭০ জনের দল এ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।