পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-দুর্নীতি ঠেকাতে আসছে সমন্বিত নীতিমালা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রমে দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি সমন্বিত নীতি চালু করতে চলেছে।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও নানা দুর্নীতির অভিযোগের ফলে এই নীতিমালা তৈরির বিষয়টি প্রস্তাবিত হয়েছে।
সূত্র মতে জানা যায়, ইউজিসি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সদস্য অধ্যাপক ডা. দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু তাহের বলেন, একাধারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নীতি নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইচ্ছামতো স্টাফ সদস্য নিয়োগ দিতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, 'আমরা একটি সম্বনিত নিয়োগ নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছি, যা যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। এতে প্রার্থীদের আবেদনের যোগ্যতা এবং পদোন্নতির পাশাপাশি তাদের বরখাস্ত করার নিয়মও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।'
বেতন-ভাতার বিষয়ে তিনি বলেন, '১৯৭৩ সালে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ১০টি বেতন গ্রেড ছিল, যা ১৯৮০ সালে বাড়িয়ে ২০-এ উন্নিত করা হয়। এখন তারা বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী চাকরি এবং পদোন্নতি পেয়েছে। আমরা নীতিটি তৈরি করতে অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো ব্যবহার করব যাতে করে বেতন গ্রেড নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে বিরোধী সৃষ্টি না হয়।'
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে তাদের নিজস্ব আইন অনুসারে খবরের কাগজে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাদের বেশিরভাগ প্রার্থীরা যে পদের জন্য আবেদন করছেন তাদের জন্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চাওয়া হয়ে থাকে।
বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক গবেষণা, আইন, প্রকৌশল, এবং কৃষি অনুষদ বিভাগের অধীনে বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয়ের মধ্যে সিজিপিএ ৪'র মধ্যে নূন্যতম ৩ থাকতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল নামমাত্র লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে এবং তাদের নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করে থাকে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইউজিসি এমন আরো অনেক অভিযোগ পেয়েছে, যেখানে নিয়োগের বিনিময়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির অবৈধ উপায়ে ১৩৯ জনের নিয়োগ ঘটনাটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
কমিটির আরেক সদস্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তারা এমন একটি নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করছে যা সকল প্রকার অনিয়ম বন্ধ করে দেবে।
এই বছরের জানুয়ারিতে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতি চূড়ান্ত করে। সেই অনুযায়ী, মাস্টার্স ডিগ্রির প্রকাশিত ফলাফল প্রাপ্ত প্রার্থীরা আবেদনের যোগ্য হবেন।
বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক গবেষণা, আইন, প্রকৌশল, এবং কৃষি অনুষদের অধীনে বিভাগগুলোতে প্রভাষক পদে আবেদনের জন্য নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪ এর মধ্যে ৩.৫ সিজিপিএ থাকতে হবে।
মানবিক ও চারুকলা অনুষদের অধীনে বিভাগে প্রার্থীদের স্নাতকে ন্যূনতম ৩.২৫ বা স্নাতকোত্তরে ৩.৫ সিজিপিএ থাকা আবশ্যক করা হয়েছে।
একজন প্রভাষককে তিন বছর পর সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে। নীতি অনুযায়ী, এমফিল ডিগ্রিধারী একজন প্রভাষককে দুই বছর সক্রিয় চাকরির পর এবং পিএইচডির এক বছর পরে পদোন্নতি দেওয়া হবে।এছাড়াও স্বীকৃত জার্নালে ব্যক্তির অবশ্যই কমপক্ষে তিনটি প্রকাশনা থাকতে হবে।
নতুন নীতিমালা অনুসারে, একজন সহকারী অধ্যাপককে সাত বছর চাকরি করার পরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া যাবে। এমফিল ডিগ্রিধারীদের পদোন্নতির জন্য ছয় বছর এবং পিএইচডি সম্পন্নদের চার বছর। সমস্ত প্রার্থীদের স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে ১২টি প্রকাশনা থাকতে হবে।
একজন সহযোগী অধ্যাপককে ১০ বছর অধ্যাপনার পর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া যাবে। এমফিল ডিগ্রিধারীরা সাত বছরের পরে এবং পিএইচডি সহ পাঁচ বছর পরে পদোন্নতি দেয়া হবে। মূল অথার হিসেবে তাদের অবশ্যই কমপক্ষে তিনটি প্রকাশনা থাকতে পারে।