১৪০ ক্রেডিটের নিচে চার বছরের স্নাতক প্রোগ্রাম অ্যাক্রেডিটেশন নয়
উচ্চশিক্ষা বিষয়ে সম্প্রতি একটি ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদন দিয়েছে সরকার। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রোগ্রামের স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তৈরিকৃত ফ্রেমওয়ার্কটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি)। ২০১৯ সালে ইউজিসি উচ্চশিক্ষার মান নির্ধারণে ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক অব বাংলাদেশ তৈরি করে। আর গত বছর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তৈরি করে বাংলাদেশ কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক। এ দুটির সমন্বয়েই বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ) অনুমোদন দেয় সরকার।
জানা গেছে, ফ্রেমওয়ার্কে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুটি অংশে ১০ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে এক থেকে ছয় ধাপ পর্যন্ত প্রি-ব্যাচেলর এডুকেশন রয়েছে। আর দ্বিতীয় অংশে সাত থেকে ১০ ধাপ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা রাখা হয়েছে। এতে বিভিন্ন ডিগ্রির অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য ন্যূনতম ক্রেডিট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তার সংখ্যা দেশে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেশি। ফলে অ্যাক্রেডিটেশন পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অধিকাংশ প্রোগ্রামের ক্রেডিট বাড়াতে হবে। বিএনকিউএফের এই দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়ন করবে বিএসি। উচ্চশিক্ষার চারটি ধাপের মধ্যে সপ্তমটিতে থাকছে স্নাতক। এছাড়া অষ্টম ধাপে পোস্টগ্র্যাজুয়েট, নবমে স্নাতকোত্তর ও দশম ধাপে ডক্টরাল ডিগ্রি থাকছে।
এ বিষয়ে বিএসির পূর্ণকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, ফ্রেমওয়ার্কে যে ক্রেডিট সংখ্যার কথা বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সে মানদণ্ড নিশ্চিত করে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ নিতে হবে। এতে লার্নিং আউটকাম, লিডারশিপ, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিতে জোর দেয়া হয়েছে। সব প্রোগ্রামে সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো পড়ানোর বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা ভালো গ্র্যাজুয়েটের আগে ভালো মানুষ তৈরি করতে চাই।
সূত্র জানায়, ফ্রেমওয়ার্কে অ্যাক্রেডিটেশন পেতে ডিগ্রিভিত্তিক ন্যূনতম ক্রেডিট সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সপ্তম ধাপে স্নাতক অংশকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রিতে ন্যূনতম ১২০, স্নাতক সম্মান বা চার বছরের ডিগ্রির জন্য ১৪০ এবং পাঁচ বছরের স্নাতক ডিগ্রির ক্ষেত্রে ১৬০ ক্রেডিট থাকবে। অষ্টম ধাপের দুই ধরনের ডিগ্রির মধ্যে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমার জন্য অন্তত ৪০ ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেটের জন্য অন্তত ৩০ ক্রেডিট লাগবে।
আর নবম ধাপে স্নাতকোত্তরের তিনটি ভাগের মধ্যে কোর্সওয়ার্কের জন্য ৪০ ক্রেডিট এবং মিক্সড মুডের ক্ষেত্রে ২০ ক্রেডিটের সঙ্গে নিবন্ধ থাকতে হবে। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রেডিটের শর্ত রাখা হয়নি। আর দশম ধাপে পিএইচডির জন্য মিক্সড মুডে ৩০ ক্রেডিটের সঙ্গে থিসিসের শর্ত রাখা হয়েছে। তবে গবেষণাভিত্তিক ডিগ্রির ক্ষেত্রে ক্রেডিটের শর্ত রাখা হয়নি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল পরিচালনায় ফ্রেমওয়ার্কটি প্রয়োজন ছিল। সম্প্রতি ইউজিসির তৈরিকৃত ফ্রেমওয়ার্কটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ফ্রেমওয়ার্কের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে কাজ করবে। এতে বেঁধে দেয়া মানদণ্ড অনুসরণ করে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণ ও স্বীকৃতি দেবে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ প্রোগ্রামে এ মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না। স্নাতক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো ক্রেডিটের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, স্নাতক পর্যায়ে ২৩টি প্রোগ্রামের সবকটিই চার বছরের অধিক সময়ের ডিগ্রি। এখন তাদের অ্যাক্রেডিটেশন পেতে সব প্রোগ্রামেরই ক্রেডিট সংখ্যা ন্যূনতম ১৪০ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক পর্যায়ের তিনটি প্রোগ্রামের ক্রেডিট সংখ্যা ১৪০-এর ওপরে আছে। বাকিগুলো ১২০ থেকে ১৩০-এর মধ্যে।
আরেক শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, চার বছরের বেশি সময়ের স্নাতক পর্যায়ে ১৬টি প্রোগ্রামের মধ্যে দুটির ক্রেডিট ১৪০-এর বেশি। বাকি ১৪টি প্রোগ্রামে ক্রেডিট সংখ্যা বাড়াতে হবে তাদেরকে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেশির ভাগ বিভাগের ক্রেডিট সংখ্যার নিয়ে সুস্পষ্ট তথ্য নেই। তবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে ক্রেডিট সংখ্যা ১২৮টি। ফলে অ্যাক্রেডিটেশন পেতে বিভাগটিকে ক্রেডিট সংখ্যা বাড়াতে হবে।
অপরদিকে ক্রেডিট আওয়ারের সংজ্ঞাও ফ্রেমওয়ার্কে ঠিক করে দেয়া হয়েছে।বলা হয়েছে, লেকচার, টিউটোরিয়াল ও সেমিনারের ক্ষেত্রে এক ক্রেডিট হলো ১৪ সপ্তাহের সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টার ফেস টু ফেস পাঠদান। ল্যাব, স্টুডিও ও ক্লিনিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে এক ক্রেডিট বলতে সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে দেড় ঘণ্টার ফেস টু ফেস পাঠদান বোঝানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে বিধিমালা ও ম্যানুয়াল প্রণয়নের কাজ চলছে। এ কাজ সম্পাদন করে শিগগিরই আমরা অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এ কার্যক্রম পরিচালনায় জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা জেনারেল এডুকেশনে ক্রেডিট নির্ধারণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক রেখেছি। এজন্য ক্রেডিট সংখ্যাও বেশি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।