সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে বর্তমান উপাচার্যের অভিযোগ মিথ্যা: ইউজিসি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, নিয়োগ নীতিমালা শিথিলকরণসহ ২৫টি অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান দাবি করেছেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজান উদ্দিনের আমলেও অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছিল।
বর্তমান উপাচার্যের মেয়ে বিভাগে একুশতম ও জামাতা ৬৭তম হওয়ার পরও শিক্ষক হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, সাবেক উপাচার্যের মেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম করে শিক্ষক হয়েছেন। তবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের করা অভিযোগের সত্যতা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
ইউজিসি বলছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিনের মেয়ে বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন এবং তার মেয়ে তৎকালীন নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এদিকে ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে একপেশে ও পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ যথাযথ হলে তা তদন্তে সম্মতি আছে। তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়া, আইনসিদ্ধভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে। আমার বিরুদ্ধে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইউজিসি কখনো পক্ষপাতমূলক তদন্ত করতে পারে না এবং তা করেও না। ইউজিসি একটি রেগুলেটরি বডি, তারা সবকিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সব সময় নিরপেক্ষ তদন্ত করে থাকে, এবারও তাই করেছে।
ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে জানান, শুধুমাত্র একটি বিভাগে (ইংরেজি) প্রভাষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৪৫৫তম সিন্ডিকেট সভায় পরিবর্তন করা হয়। এই পরিবর্তিত নীতিমালার ভিত্তিতে তৎকালীন উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন তার মেয়েকে ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল ৪৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দান করেন।
উল্লেখ্য পরিবর্তিত নীতিমালাটির শর্তাবলী হুবহু তার মেয়ের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রাপ্ত সিজিপিএ-কে ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা। মেয়ের নিয়োগের অব্যাবহিত পরেই ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর ৩৬২তম সিন্ডিকেট সভায় তৎকালীন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে ও ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করেন।
ইউজিসি বলছে, এই চিঠির মাধ্যমে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ইঙ্গিত করেন যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। তার এই অভিযোগটি সত্য কি না, সে বিষয়েও তদন্ত করে ইউজিসি। উপাচার্যের অভিযোগ যাচাই করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে প্রণীত নীতিমালা তদন্ত কমিটি পর্যালোচনা করেছে।
এতে কমিটি দেখেছে, ২০১২ সালের নীতিমালার চেয়ে ২০১৪ সালে ইংরেজি বিভাগের জন্য প্রণীতি নীতিমালা উন্নতমানের এবং ২০১৭ সালের নীতিমালা অন্যান্য নীতিমালার থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রাক্তন উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের মেয়ে রিদিকা মিজান তার বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রাক্তর উপাচার্য তার মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার প্রচলিত নীতিমালার চেয়ে উন্নতমানের নীতিমালাতে। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান প্রচলিত নীতিমালাকে পরিবর্তন করে নিম্নমানের নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন এবং তার মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে বর্তমান উপাচার্যের দুর্নীতি ও অনিয়ম বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বর্তমান উপাচার্য যেগুলো অভিযোগ তুলেছিল সে বিষয়গুলোও আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন করেছি।