১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৫২

সাবেক চেয়ারম্যানসহ ইউজিসির ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এআইইউবি শিক্ষার্থীর মামলা

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও ইউজিসি লোগো  © টিডিসি ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করেছেন বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রবিউস সানি শিপু। গত ১১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানার ২৬ নাম্বার মামলায় ধারা ১৪৭, ১৪৮, ১৫৩, ১২০ (বি), ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ১০৯, ৩৪ পেনাল কোডে ২৯ জনকে আসামি করা হয়।

এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি, আশুলিয়া থানার সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম এবং পুলিশের বিভিন্ন সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মোট ১৬ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি-সোটা, দেশিয় অস্ত্র দিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে আহত করার অভিযোগে আসামি করা হয়। 

আরও পড়ুন: মুখে মুখে আদেশ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেন অধ্যাপক আলমগীর

মামলার এজহারে আসামী করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক সচিব ফেরদৌস জামান, সাবেক সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. সাজ্জাদ হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. জামিনুর রহমান, মো. ফজলুর রহমান, উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ, মো. গোলাম দস্তগীর, ইউসুফ আলী খান ও অতিরিক্ত পরিচালক শাহীন সিরাজ, সহকারী পরচিালক ফরিদুজ্জামান এবং মো. শরিফুল ইসলাম।

‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের অন্তত ২০ দিন পর ঢাকার বাইরের একটি স্থানে পুলিশের গুলি এবং তাতে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় ইউজিসি কর্মকর্তাদের জড়িয়ে মামলা করা- বিষয়টি অযৌক্তিক। এটা স্পষ্টত প্রমাণ করে, ইউজিসি’র কোনো কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলায় কর্মকর্তাদের নাম জড়িয়েছেন। তাছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ইউজিসির ‘টপ টু বটম’ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও বেমানান।’

ইউজিসির সাবেক সদস্য এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ হিসেবে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অন্যায় আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা, উসকানি, ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করে সংঘটিত অপরাধে সহযোগী হিসেবে কাজ করার কথা বলা হয়। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সশরীরে এবং ফোনে হুমকি প্রদান করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া এবং উসকানিদাতা এবং সংঘটিত অপরাধে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় সুশাসনের দায়িত্বে থেকে নিজেই নানা অপকর্মে জড়ান ড. সাজ্জাদ

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রবিউস সানি শিপু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাকে যারা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন তাদের আইনের আওতায় আনতে মামলা দায়ের করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বন্ধ ঘোষণা করার জন্য বল প্রয়োগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। অনেকে সরাসরি জুলাই গণহত্যার সাফাই গেয়ে এটিকে সমর্থন জানায়। ফলে আমি তাদেরকে আসামি করে মামলা করেছি।

আরও পড়ুন: ইউজিসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক আলমগীরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি সূত্র জানায়, ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের অন্তত ২০ দিন পর ঢাকার বাইরের একটি স্থানে পুলিশের গুলি এবং তাতে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় ইউজিসি কর্মকর্তাদের জড়িয়ে মামলা করা- বিষয়টি অযৌক্তিক। এটা স্পষ্টত প্রমাণ করে, ইউজিসি’র কোনো কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলায় কর্মকর্তাদের নাম জড়িয়েছেন। তাছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ইউজিসির ‘টপ টু বটম’ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও বেমানান। শীর্ষ পর্যায়ের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি চিহ্নিত করতে তারা কাজ করছেন এবং অনেকটা এগিয়েও গেছেন বলে জানান তিনি।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করায় রবিউস সানি শিপু নিজ এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন। গত ৪ আগস্ট বাইপাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিতেভাবে গুলি ছোঁড়ে। ফ্রন্টলাইনে থাকায় রবিউস সানি শিপুর পেটে এবং পায়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গুলি করে। এতে মারাত্মক আহত হয়ে তিনি প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন। 

আরও পড়ুন: নর্থ সাউথে স্বেচ্ছাচারী-দুর্নীতিপরায়ণ ট্রাস্টিদের পুনর্বাসন হচ্ছে?

আসামিদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আরাফাত হোসেন র‌্যাব এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। 

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমরা এ বিষয়টি আজকেই কেবল শুনেছি। কমিশনে যারা নতুন সদস্য হিসেবে যোগদান করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই করণীয় ঠিক করব।’