পারফর্ম্যান্সভিত্তিক বাজেট পাবে বিশ্ববিদ্যালয়, সূচক নির্ধারণ করছে ইউজিসি
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রণীত ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮-৩০ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পারফর্মান্স ভিত্তিক বাজেট প্রবর্তন করা হচ্ছে। এ জন্য ইউজিসি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পারফর্ম্যান্স সূচক নির্ধারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ইউজিসি আয়োজনে দিনব্যাপী এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মদক্ষতা ভালো হলে তারা বেশি বাজেট বরাদ্দ পাবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভালো কাজ করার একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও প্রমাণক ব্যবস্থাপনা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের খসড়া কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা ও ফিডব্যাক প্রদান বিষয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শাহ্ আজম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, যেকোন কাজ নির্দিষ্ট সময়ে এবং যথাযথভাবে সম্পন্ন করার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রকল্প পরিকল্পনাগত ত্রুটির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায় না। ফলে কাজের ব্যয় বাড়ে এবং অংশীজনেরা কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। অন্যদিকে যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি থাকায় প্রকল্প টেকসই হয় না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মেধাবীদের বড় অংশ বিদেশে চলে যাওয়ায় দেশের কর্মবাজারে বিদেশীদের নিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রায় বড় অংকের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের চাহিদা উপযোগী জনবল তৈরিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক আলমগীর আরও বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন গবেষণার সংখ্যা বাড়াতে হবে। গবেষণাকর্মকে উৎসাহিত করতে ইউজিসি পিএইচডি স্কলারশিপের সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও পিএইচডি স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আলাদা বাজেট প্রদানের ক্ষেত্রে ইউজিসি উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।
রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য অর্জনে স্মার্ট সিটিজেন তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। এপিএ পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে শৃঙ্ক্ষলা এনেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন: প্রায়োগিক গবেষণায় গুরুত্ব দিতে গবেষকদের প্রতি আহবান ইউজিসির
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শাহ্ আজম বলেন, এপিএ’র জন্য একটি অর্থবছরের গুরুত্বপূর্ণ কাজের টার্গেট নির্ধারণ করতে হয়। টার্গেট পূরণ করতে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করার একটি তাগিদ সবার মধ্যে কাজ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজে গতিশীলতা আসে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা ও গবেষণায় সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ইউজিসি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ফোকাল পয়েন্টদের এপিএ বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।
ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট বিষ্ণু মল্লিক’র সঞ্চালনায় কর্মশালায় ইউজিসি, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিএ কমিটির আহবায়ক, ফোকাল পয়েন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।