২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৪

চমেবি ভিসির নেওয়া অতিরিক্ত বেতন-ভাতা ফেরত দিতে বললো ইউজিসি

চমেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নিয়ম ভেঙে গৃহীত অতিরিক্ত ভাতা, বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ফেরতের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠান ইউজিসি গত বছরের শেষ দিকে এক চিঠিতে উপাচার্যকে এসব সুবিধা ফেরতের অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা চিঠি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এবং বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি উপাচার্যকে ফেরত দিতে তিন মাসের মধ্যে।

ইউজিসির চিঠির তথ্য মতে, বিগত বছরের ১৩ ডিসেম্বর চমেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে সময়সীমা বেঁধে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে একই বছরের মাঝামাঝিতে ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনায় মোট সাতটি অনিয়ম ধরা পড়ে। এরপর এ নিয়ে নতুন করে চলতি বছরের শুরুতে আরও বিষদ অনুসন্ধানের জন্য নতুন একটি কমিটি করে ইউজিসি। কমিশনের ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট শাখার তিন কর্মকর্তাকে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিকে জানিয়েছেন এবং এরপর বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি আর কোনো কিছু জানতে চায়নি। -ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ডেপুটি ডিরেক্টর

ইউজিসি থেকে অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশনের বাজেট পর্যালোচনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চিকিৎসা ব্যয় বাবদ রাজস্ব তহবিল হতে ৩ লাখ টাকা খরচে নিয়মের ব্যত্যয় ও রাজস্ব ক্ষতির বিষয়ে ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা কমিটির পরিলক্ষিত হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, উপাচার্যের নিজের চিকিৎসাজনিত ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিল হতে নির্বাহ করা আইনসিদ্ধ হয়নি। ফলে আলোচ্য খাত হতে উপাচার্য কর্তৃক গৃহীত সমুদয় অর্থ পত্র প্রাপ্তির ০১ (এক) মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা প্রদানপূর্বক কমিশনকে অবহিতকরণের জন্য জানিয়েছে ইউজিসি।

এছাড়াও একই চিঠিতে ইউজিসি জানিয়েছে, চমেবি উপাচার্য বেতন প্রথমে ২০১৭ সালের ১৪ মে থেকে ২য় গ্রেড এবং পরবর্তীতে একই বছরের জুন থেকে ১ম গ্রেডে নির্ধারণ করায় নিয়মের ব্যত্যয় ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি কমিটির নজরে এসেছে। ইউজিসি বলছে, কমিটির সুপারিশ এবং সরকারি আর্থিক নিয়মানুযায়ী, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পূর্বে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান হতে আহরিত বেতন-ভাতাদির সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ ৩য় গ্রেডে প্রাপ্ত প্রাপ্য হবেন। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গৃহীত সুবিধা অতিসত্বর রহিত করে উপাচার্য ৎ কর্তৃক এ যাবত গৃহীত অতিরিক্ত সমুদয় অর্থ পত্র প্রাপ্তির ৩ মাসের মধ্যে প্রদানপূর্বক কমিশনকে অবহিতকরণের জন্য জানিয়েছে ইউজিসি।

এর আগে নিয়ম ভেঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান নিজেই তার বেতন বাড়িয়ে নেন। বিষয়টি ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনায় ধরা পড়ে। এছাড়াও ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনায় ধরা পড়ে আরও বেশ আর্থিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়ম। এরপর বিষয়টি নিয়ে সরব হয় দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা ইউজিসি। কমিশনের বাজেট পর্যালোচনা দল চমেবির আটটি খাতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যার মধ্যে সাতটি খাতে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছিল তারা।

এর মধ্যে—নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানের বেতন স্কেল তৃতীয় গ্রেডের। কিন্তু সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনি প্রথম গ্রেডের বেতন গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি নিজেই নিজের বেতন বৃদ্ধির এই বিষয়টি সিন্ডিকেট থেকে পাস করিয়েও নিয়েছিলেন। এর বাইরে, নিজের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন উপাচার্য।

ইউজিসির ওই পর্যবেক্ষণে জানানো হয়েছিল, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান থেকে আহরিত বেতন-ভাতাদির সমপরিমাণ অর্থ মাসিক বেতন হিসেবে প্রাপ্য হবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নিয়ম পরিবর্তন করে তাঁর বেতন প্রথম গ্রেডে উন্নীত করে। এই এখতিয়ার সিন্ডিকেটের নেই।

উপাচার্য হিসেবে ইসমাইল খান প্রথম গ্রেডে মূল বেতন পান ৮৩ হাজার টাকা। আর ভাতাসহ তিনি পান মোট প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অথচ তাঁর তৃতীয় স্কেলে মূল বেতন ছিল ৭৪ হাজার টাকা।

সরকারের সর্বশেষ পে-স্কেল অনুযায়ী প্রথম গ্রেডে সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে মোট বেতন-ভাতা দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ইসমাইল খান প্রথম গ্রেডে মূল বেতন পান ৮৩ হাজার টাকা। আর ভাতাসহ তিনি পান মোট প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অথচ তাঁর তৃতীয় স্কেলে মূল বেতন ছিল ৭৪ হাজার টাকা। এ অবস্থায় এলপিসি অনুযায়ী তাঁর বেতন নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

ইউজিসির পর্যবেক্ষণে উঠে আসা চমেবির আর্থিক অনিয়মের আরেকটি হলো অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ছয় কর্মচারীকে উচ্চতর স্কেলে বেতন দেওয়া। এতে প্রতিমাসে মূল বেতন ৫২ হাজার টাকাসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আড়াই লাখ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।

এ বিষয়ে ইউজিসি বলছে, অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করেন। তাদের উচ্চতর স্কেলে বেতন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও তাদের কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতার কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি। এ ধরনের কাজকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা স্পষ্ট করে বলেও অভিমত কমিশনের।

চমেবি উপাচার্যের চিকিৎসা ব্যয় বাবদ রাজস্ব তহবিল হতে ৩ লাখ টাকা খরচে নিয়মের ব্যত্যয় ও রাজস্ব ক্ষতির বিষয়ে ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা কমিটির পরিলক্ষিত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য ইসমাইল খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন প্রতিবেদক। উপাচার্য লিখিত বার্তাতে বিষয় সম্পর্কে জানতে চান এবং পরবর্তীতে কথা বলবেন বলে জানান। এরপর তাকে লিখিত বার্তায় বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে বক্তব্য প্রদান করেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ডিরেক্টর ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা ইউজিসিকে জানিয়েছেন এবং এরপর বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি আর কোনো কিছু জানতে চায়নি। অর্থাৎ ইউজিসি বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট, না হলে তারা নিশ্চয়ই আমাদের কাছে জানতে চাইতো বলেও জানান তিনি।