পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব বিদ্যাপীঠে পড়তে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার হল জীবনের স্বাদ না পেয়েই অনেককেই শেষ করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত ‘৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২’-এ উঠে এসেছে এমন চিত্র।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরে সব শিক্ষার্থীও আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা। তাছাড়া আরও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা শূন্যের কোটায়।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু না হওয়া, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদানসহ প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আররি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর মাধ্যমে। ফলে প্রশাসন অছাত্র ও বহিরাগতদের বের করতে পারেনা। এতে বৈধ শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউজিসির সর্বশেষ (২০১২) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৯৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থীর। প্রতিবেদন অনুযায়ী শতকরা ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩টি আবাসিক হল ও ছাত্রাবাস রয়েছে। ১৬ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা হলেও অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। ৩৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫ শতাংশের নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ হাজার ৫২৭ শিক্ষার্থী থাকলেও কোনো আবাসন সুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন আবাসনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ শতাংশের নেই কোন আবাসনের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৪৪৭ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬টি হল রয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজর ২৮৪ শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি হল রয়েছে। আর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২১৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭টি হল রয়েছে।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৪২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৮৭৬ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৭ হাজার ১৩৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার ২৭৬ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৬৭৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৫৩২ জন, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ হাজার ২০৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৯০১ জন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৬৩৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৭২৭ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৪৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৬৭০ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৪৭৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৩৭৪ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৫৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৮৪০ জন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭৮৮ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোপালগঞ্জ) ১১ হাজার ৪৩৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৮৬১ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ হাজার ১১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে। ৮টি হলে ২ হাজার ৯৯৬ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ হাজার ৮১৩ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার্থীদের ৮টি আবাসিক হল রয়েছে। এসব হলে ৩ হাজার ৮৯৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের সুযোগ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪১ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৯২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৭৯৭ জনের, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার ৭২৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৪ জন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার ১৭২ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৭০ জন, চুয়েটে ৫ হাজার ৫৭৪ জনের মধ্যে ৪ হাজার ১৭৪ জন, রুয়েটে ৬ হাজার ৩৭৬ জনের মধ্যে ২ হাজার ৬ জন, কুয়েটে ৭ হাজার ৯৪১ জনের মধ্যে ২ হাজার ৬১৯ জন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ১ হাজার ৫৩৩ জনের মধ্যে ১ হাজার ২১৪ জন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭১৪ জনের মধ্যে ১ হাজার ২৫৫ জন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৫৯ জনের মধ্যে ৮৭৪ জন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ৯ হাজার ৩৬০ জনের মধ্যে ৪৩২ জন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৩৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ১১৭ জন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৩৪৬ জনের মধ্যে ১ হাজার ৭০৮ জন, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০৯ জনের মধ্যে ১৭০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা শূন্যের কোটায়:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (কিশোরগঞ্জ), হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (খুলনা), কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিরোজপুর)।