শিক্ষিত বেকার তৈরি: নীতি-নির্ধারকদের সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:২২ PM , আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:১৩ PM
দেশে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া ‘শিক্ষিত ও অভিজাত বেকার’ তৈরির বিষয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বললেন, শুধু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। কারণ, অভিভাবকগণ অনেক কষ্ট করে তাদের ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন করেন। খেয়াল রাখতে হবে, উচ্চশিক্ষা নিতে এসে তারা যাতে শিক্ষিত ও অভিজাত বেকারে পরিণত না হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনাগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘নবম ইউজিসি পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ৩৯ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে চতুর্থ। সময়োপযোগী শিক্ষানীতি ও এর সফল বাস্তবায়নের সুবাদে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি দেশে উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে বেসরকারি খাতের অবদানের প্রশংসা করার পাশাপাশি এ কথাও বলেন যে, শিক্ষার নামে বাণিজ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত শিক্ষা প্রদান ব্যহত হচ্ছে।
ইউজিসিকে উদ্দেশ্য করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে পারে; সেজন্য গুণগত উচ্চশিক্ষার সমধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানকে আরো উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, “সময় এবং যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাপক ভিত্তিতে বেড়েছে। শিক্ষার্থীরাও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। মেয়াদ শেষে ডিগ্রিও পাচ্ছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ, অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধাসহ শিক্ষক স্বল্পতার কারণে মানসম্পন্ন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গবেষণা ও গবেষকদের মান নিয়েও ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাই উচ্চশিক্ষার প্রতিটি স্তরে মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউজিসিকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রমুখ।
স্বর্ণপদক পেলেন ৩৫ শিক্ষক: এদিকে সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষককে ‘ইউজিসি স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই পদক তুলে দেন।
এর মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট, ব্র্যাক এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে মোট ৩ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২জন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে মোট ৩৫ জন গবেষক এই পদক পান। ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত উচ্চশিক্ষায় মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনায় উৎসাহ প্রদানের জন্য ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড’ (বর্তমানে ইউজিসি স্বর্ণপদক) প্রবর্তন করা হয়। নির্বাচিত শিক্ষকদের প্রত্যেককে সনদ ও স্বর্ণপদকসহ পুস্তকের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং প্রবন্ধের জন্য ৩০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।
যেসব গবেষণা, প্রকাশনা ও বই দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখবে সেগুলো কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত গবেষকদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।