প্রকল্পের অর্থের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিতের আহবান ইউজিসি চেয়ারম্যানের
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারমান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রকল্পের অর্থ যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের অর্থ বাড়তি খরচের এক ধরনের প্রবণতা আমাদের দেশে রয়েছে। এ অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের কষ্টার্জিত আয় থেকে ঋণের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তাই এই অর্থ ব্যয় শতভাগ যথার্থ হওয়া উচিত।
হিট ও আইসিএসইটিপি প্রকল্প দুটি’র কার্যক্রম বিষয়ে ইউজিসি কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি সোমবার (১০ জুলাই) এ আহ্বান জানান। সভায় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের এবং ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বক্তব্য দেন।
ইউজিসি’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া সভায় প্রকল্প দুটি’র সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। সভায় কমিশনের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এ সময় দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও রূপান্তর, আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ এবং আইসিটি খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ ও ‘ইম্প্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন (আইসিএসইটিপি)’ প্রকল্প সুষ্ঠু বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে উচ্চশিক্ষার মনোন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকার ইউজিসিকে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে। এটা কমিশনের জন্য বড় অর্জন। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক আলমগীর বলেন, এডিবি উচ্চশিক্ষায় আইসিটি প্রকল্পে প্রথম বিনিয়োগ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ইউজিসি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে, দেশের উচ্চশিক্ষার রূপান্তর, গতি ত্বরান্তিতকরণ, আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের জন্য হিট প্রকল্প গ্ৰহণ করা হয়েছে।
প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকলেও ইউজিসির এ ধরনের কাজে সক্ষমতা আছে বলে অধ্যাপক আলমগীর তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রকল্প দু’টির বাস্তবায়ন ইউজিসির জন্য শুভ সূচনা হবে। এর মাধ্যমে ইউজিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, বড় প্রকল্পে বিনিয়োগে দাতারা এগিয়ে আসবে। প্রকল্প দু’টি অনুমোদনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ ও ‘ইম্প্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন (আইসিএসইটিপি)’ শীর্ষক দু’টি প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে ইউজিসি কাজ শুরু করেছে।
পাঁচ বছর মেয়াদী হিট প্রকল্প শুরু হবে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫০.৯৬ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। অন্যদিকে ৪৯.৪ শতাংশ বহন করবে বিশ্বব্যাংক।
প্রকল্পে বাজার চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা কোর্স প্রবর্তন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জন্য অ্যাকাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং দেশের উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’র কার্যাবলী বাস্তবে রুপান্তর করা, ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিযোগিতামূলক গবেষণার উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করা, শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ফ্যাকাল্টি ও স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম, ক্রেডিট ট্রান্সফার, শিক্ষকদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগসহ বহুমূখী কার্যাবলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্য্যদিকে, বাংলাদেশে আইসিটি খাতের উন্নয়নে এবং দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার জন্য গৃহীত আইসিএসইটিপি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৮৭.৭২ শতাংশ বহন করবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকার বহন করবে বাকি ১২.২৮ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প চলতি অর্থবছরে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ইউজিসির তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।