২৯ মে ২০২৩, ২০:১৯

বুয়েটসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পেল ইউজিসি

বুয়েট, হাবিপ্রবি, ইবি ও শেকৃবি   © লোগো

সম্প্রতি দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটের অর্থ ব্যয়ে ২০ ধরনের আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এসব অনিয়ম বন্ধে কমিশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫৫টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু এসব অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত উপচার্যরাও। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এক অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মূল বেতনের বাইরেও বিশেষ ভাতা, দায়িত্ব ভাতা, স্যাংচুয়াল ভাতাসহ বিভিন্ন নামে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণ করেছেন। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।

২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত এলাওয়েন্স পেতেন। কিন্তু পরবর্তীতে এটি বাতিল করা হয়। এখন কোনো উপাচার্য এ ধরনের ভাতা গ্রহণ করলে সেটি নিয়মবহির্ভূত হবে। একইসঙ্গে কেউ এ ধরনের ভাতা গ্রহণ করলে তাদের সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে- অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের

জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী উপাচার্যগণ বেতনের বাইরে চিকিৎসা ভাতা, উৎসবভাতা এবং যাতায়াত ভাতাসহ সরকারি বিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে তাদের অতিরিক্ত কোনো ভাতা গ্রহণের সুযোগ নেই। 

তবে নিয়ম না থাকলেও বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান, শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া এবং ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম মূল বেতনের বাইরে পৃথক ভাউচার দেখিয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণের বিষয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে না। কাগজপত্র দেখে পরবর্তীতে জানাতে পারবো।

আরো পড়ুন: লিফটবিহীন দশতলা ভবনে থমকে আছে শিক্ষা কার্যক্রম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। বেতনের বিষয়টি আমাদের একাউন্টস দপ্তর দেখে। তারাই বেতন করে একাউন্টে পাঠায়। এ বিষয়ে একাউন্টসের ডিরেক্টরের সাথে কথা বলতে পারেন। যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না তাই মন্তব্য করতে পারছি না।

এ বিষয়ে অর্থ দপ্তরের পরিচালকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এধরনের ভাতা অনেকবছর ধরেই উপাচার্যরা পাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান উপাচার্যও হয়ত পাচ্ছেন।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বলেন, আমি কোনো অতিরিক্ত ভাতা বা বিধিবহির্ভূত ভাতা গ্রহণ করছি না। তবে ইউজিসি অনুসন্ধানে এ ধরনের কেনো তথ্য এলো—  এ বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর প্রদান করতে পারেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত এলাওয়েন্স পেতেন। কিন্তু পরবর্তীতে এটি বাতিল করা হয়। এখন কোনো উপাচার্য এ ধরনের ভাতা গ্রহণ করলে সেটি নিয়মবহির্ভূত হবে। একইসঙ্গে কেউ এ ধরনের ভাতা গ্রহণ করলে তাদের সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে বলেও জানান অধ্যাপক মো: আবু তাহের।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ খাতে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউজিসির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেটের অর্থ ব্যয়ের একটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছে। এত যে অনিয়মগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে এবং সংশোধন করতে বলা হয়েছে। যদি তারা এগুলো সংশোধন করে এবং নিয়ম বহির্ভূতভাতে নেয়া অর্থ ফেরত দেয় তবেতো বিষয়টি নিয়ে আর প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু যদি তারা সেটি না করে তবে পরবর্তীতে এগুলোতে অডিট আপত্তি হবে।