বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু ডিগ্রি বা সনদ দিলে হবে না: ভিসিদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষ্যে সোমবার এক বিশেষ আলোচনা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম যথাক্রমে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্য আরমা দত্ত এমপি, ডা. নুজহাত চৌধুরী, তানভীর হায়দার চৌধুরী, শমী কায়সার ও রোকাইয়া হাসিনা নীলি স্মৃতিচারণ করেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম অপরাধ। এসব হত্যাযজ্ঞে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাদের সকলকে চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। ইতোমধ্যে, চিহ্নিত কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে। সব ঘাতকের বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে।  এ দায়মুক্তির কাজ বর্তমান সরকারের অধীনেই সম্পন্ন করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু ডিগ্রি বা সনদ দিলে হবে না। শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে লাখো শহিদ জীবন দিয়েছেন সে স্বপ্ন পূরণে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশীদার ছিলেন। স্বাধীন দেশের জন্য মানুষকে নানাভাবে তারা উদ্বুদ্ধ করতেন। এজন্য স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তাঁদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষ দিকে এসে পরাজয়ের আগ-মুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তখন তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল জাতির অগ্রণী শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রথিতযশা ব্যক্তিদের। এসব হত্যার কারণটি স্পষ্ট, পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করে দিতে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন কর্মমুখী শিক্ষা প্রয়োজন। একইসঙ্গে দেশপ্রেমিক ও ইতিহাসবোধসম্পন্ন সত্যিকারের বাঙালি হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকরা জাতির বাতিঘর, তাদেরকেই এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তরুণদের গড়ে তোলার আহবান জানান। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে তিনি সকলকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।  

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অসম্ভব দেশপ্রেম ছিল। তরুণ প্রজন্মে বুদ্ধিজীবীদের দেশপ্রেম থেকে অনুপ্রাণিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পথ দেখাতে হবে।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ