সুন্দরবনের মালিকানা দাবি করলেন ‘নব্য জমিদার’!
ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত থাকা জমিদারি প্রথা পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালে রদ হয়ে যায়। এখন স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের সব সম্পদের মালিক সরকার। কিন্তু সুন্দরবনের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা এলাকায় জমিদারি প্রজাস্বত্ব দাবি করে বসেছেন এক ব্যক্তি।
শুধু তাই নয়, নিজের বাড়িতে সদর দফতর স্থাপনের পাশাপাশি শরণখোলায় অফিস খুলে মাইকিং করে সবাইকে প্রজা অভিহিত করে তার আনুগত্য স্বীকার করতে বলেছেন তিনি। জমি বন্দোবস্ত নেওয়া ও তাকে খাজনা দিতে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ওই ব্যক্তির নাম আ. সামাদ হাওলাদার।
জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বাড়ইখালীর আকবর আলী হাওলাদারের ছেলে আ. সামাদ হাওলাদার। বাবা জেলে ছিলেন। বাড়িতে অফিস খুলে এভাবে তার প্রতারণা করার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব’ শিরোনামে সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছেন সামাদ। নিজেকে ঘোষণা জমিদার হিসেবে। নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে স্থানীয় সহজ-সরল মানুষদের নিকট খাজনা দাবি করার পাশাপাশি জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার মতো অপকর্মও করছেন কয়েক বছর ধরে।
সর্বশেষ শরণখোলায় অফিস খুলে প্রতারণার চেষ্টা করেন। তবে সফল হননি। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। তবে আটক করা যায়নি তাকে।
জানা গেছে, জমিদারি আমলে ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব’ নামে কল্পিত আইনের গল্প তৈরি করে তিনি হয়ে যান এস্টেটের জমিদার। তার বানানো গল্প অনুযায়ী এস্টেটের অধীনে বৃহত্তর খুলনা জেলার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনার সকল জমি ছিল। তবে শরণখোলা আর মোরেলগঞ্জে জমিদারি স্বত্ব দাবি করেন তিনি।
দীর্ঘদিন এভাবে প্রতারণা চালালেও বিষয়টি এতদিন সামনে আসেনি। তবে সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার অভিযানে শুরু করেন শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন। এসময় তার সাইনবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করা হয়। অফিসও তালাবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি মাইকিং করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হতে আহবান জানানো হয়।
স্থাণীয় রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, তিনি কিছু এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজু সরদার বলেন, সামাদ তার এস্টেটের সদস্য হতে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর জমির খাজনা দিতে বলেন।
মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু বলেন, সামাদের পিতা আগে মাছ ধরতো। তার পুত্র এখন প্রতারণা করে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেছে। তিনি প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সামাদ হাওলাদার সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, জমিদারি আমলের কাগজপত্র ও আদালতের নির্দেশে জমির মালিক তিনি। এজন্য তার কাছ থেকে নতুন করে জমি বন্দোবস্ত নিতে হবে সবার। তবে কোন আদালতের নির্দেশ সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন গণমাধ্যমকে বলেন, তথাকথিত এস্টেটের নামে সামাদ ও তার অনুসারীরা বাংলাদেশকে অস্বীকার করছে। এখন আর জমিদারি প্রথা নেই, জমির মালিক সরকার। খবর পেয়ে তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শরণখোলায় কেউ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।