দুপুরে-রাতে যাই খান, সকালের নাশতা হতে হবে ভরপুর ও পুষ্টিকর
আমাদেরকে প্রাণবন্ত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে সকালের নাস্তা। দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, নাস্তা না খেয়ে অফিসের জন্য ছোটা, এ যেনো আমাদের নিত্যদিনের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। অনেকেই ঘুম থেকে ওঠে সকালে না খেয়ে দিনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন। এই অভ্যেস ভবিষ্যতের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেটা আমাদের কল্পনারও বাইরে। অনেকেই ভাবেন সকালের নাস্তা খেলে ওজন ভেড়ে যায়।
সকালের খাবার খেলে অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার এটি শরীরের শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে এছাড়াও, নিয়মিত সকালের নাস্তা করলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে অবশ্যই সেটি হতে হবে পুষ্টিকর। সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকে ফলে যা খাওয়া হয় তা হজম হয়ে যায়।
পুষ্টিবিদ ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘সকালের একটি ভালো মানের নাস্তা হতে পারে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পূর্ণশক্তি। দুপুরে বা রাতে আপনি যাই খান না কেনো, সকালের নাশতাটা হতে হবে ভরপুর ও পুষ্টিকর।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে সকালের খাবার গ্রহণ করেন, তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম। ডায়েটের বাহানায় যারা সকালের খাবার এড়াতে চান, তাদের ওজন কমার চেয়ে বেড়ে যাবার ঘটনা ঘটেছে, এটা গবেষণায় প্রমাণিত।
পুষ্টিবিদ ফাতেমা তুজ জোহরা আরও বলেন, সকালে লাল আটার রুটি খেতে পারলে খুব ভালো। সাথে দেশীয় ফল রাখা যেতে পারে। মৌসুমী শাক সবজি অথবা ডাল দিয়ে রান্না করা সবজিও খেতে পারেন সকালের নাস্তায়। কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে একটি করে ডিম নাস্তায় রাখা খুবই জরুরী।’
সময় না থাকলেও ঝটপট কিছু দিয়ে হলেও সকালের নাস্তা পর্ব সেরে নেবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই তাড়াহুড়ো করে অফিসে চলে যেতে চান, সকালে রুটি খেয়ে যাওয়াকে সময় নষ্ট মনে করেন। তারা দুধ দিয়ে ওটস খেতে পারেন। সাথে বাদাম ও শুকনো ফল খেতে পারেন। সাথে একটি ডিম সেদ্ধ রাখতে পারেন। তাহলে সারাদিন না খেয়ে থাকার চেয়ে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ৭টি কৌশল
সকালে নাস্তা না খেয়ে থাকার অপকারিতা সম্পর্কে ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘নাস্তা না খাওয়ার কারণে বেলা বাড়লেই মাথা ঝিমঝিম করা শুরু হয়। বুক গলা জ্বলা, এসিডিটি, বমি বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক, আলসারের মতো অস্বস্তিকর ও দীর্ঘস্থায়ী অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, লিভার ও কিডনি জটিলতায় ভোগা রোগীদের আরও বেশি জটিলতায় ভুগতে দেখা যায়, যা এক পর্যায়ে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যারা সকালের নাস্তা এড়িয়ে চলেন, তাদের ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগেও ভুগতে দেখা যায়।’
জাপানের জার্নাল অফ হিউম্যান সায়েন্সেস অফ হেলথ-সোশ্যাল সার্ভিসেস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে খালি পেটে থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষ ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার অসুখে ভুগছেন। ৫২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে ছয় বছর ধরে চলা ওই গবেষনা বলছে, যারা সকালে নাস্তা না করে কাজে বের হন, তারা অন্যদের তুলনায় চার গুণ বেশি স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার অসুখে ভোগেন।
প্রতিদিন সকালে সঠিক সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকার পাশাপাশি সুস্থ থাকবে শরীর ও মন, জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।