১০ আগস্ট ২০২২, ২১:০৫

বেকারত্ব নিরসনের প্রথম পদক্ষেপ হোক একটি ‘ট্রেড লাইসেন্স’

ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে নেবেন  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ার কারণে যথাযথ কর্মসংস্থান বরাবরই এখানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। জনশুমারি-২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী দেশের তরুণ জনগোষ্ঠি মোট জনসংখ্যার ২৭% যেটা সংখ্যায় সাড়ে চার কোটির বেশি। অন্যদিকে সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪৭% এবং প্রতিবছর দেশের শ্রমজারে যুক্ত হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ।

সহজেই অনুমেয় শুধুমাত্র চাকরি কেন্দ্রিক মনোভাব দেশের তরুণ জনগোষ্ঠিকে মুক্তি দিতে পারবে না এবং একইসাথে শ্রমশক্তির অপচয়ও হবে। চাকরির বিকল্প হিসেবে সবসময়ই এসেছে ব্যবসায় উদ্যোগ বা নান্দনিক ব্যবসার ভাবনা।

বর্তমান সময়ে অনেকেই শুরু থেকেই চাকরির বদলে উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা করেন। উল্লেখ্য একজন উদ্যোক্তার পরিচয়পত্র হিসেবে প্রথমেই যে জিনিসটি আসে সেটি ‘ট্রেড লাইসেন্স’। বৈধ ব্যবসার ধরন যেমনটাই হোক এটি একটি আবশ্যক ডকুমেন্ট এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকেরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা থাকে।

স্বাভাবিকভাবে, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঠিকান স্থানীয় সরকারের যে ইউনিটের মধ্যে পড়ছে সেখান থেকে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ প্রাপ্তির আবেদন করতে হবে যেমনঃ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন। তবে এখানে অবশ্যই কিছু ধাপ অনুসরন করতে হয়।

আরও পড়ুন: জনপ্রতিনিধিদের কারণেই ৬৬ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বেকার: শিক্ষামন্ত্রী

ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনপত্র সংগ্রহ করার পর তা নির্ভুলভাবে পূরণ করে এর সাথে ছবি (৩ কপি), জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি/পাসপোর্টের ফটোকপি, দোকান/অফিস ভাড়ার বিল, পার্টনারশিপ ডিড(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) জমা দিতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে আবেদনকৃত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়াও কিছু বিশেষ বিষয় একজন তরুন উদ্যোক্তা বিশেষ বিবেচনায় রাখতে পারেন যেমনঃ নির্ধারিত বিজনেস জোনে ব্যবসা করতে হলে ব্যবসার ঠিকানা অবশ্যই ওই বিজনেস জোনের মধ্যে হতে হবে (সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রিক)।

ব্যবসার ধরন যদি ম্যানুফেকচারিং/উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয় সেক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার সার্টিফিকেট, স্থানীয় প্রতিনিধির অনাপত্তিপত্র, প্রতিবেশিদের অনাপত্তিপত্র, কারখানার অবস্থান ও বিবরণসহ নকশা বা লোকেশন ম্যাপ ইত্যাদি ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। 

অনুরুপভাবে ব্যবসার ধরণ যদি সেবামূলক হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ভিন্নতা আসতে পারে যেমনঃ সিএনজি/দাহ্য পদার্থের ব্যবসার ক্ষেত্রে- বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ সুরক্ষার ছাড়পত্র।প্রাইভেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে- ডিরেক্টর জেনারেল স্বাস্থ্য থেকে প্রদত্ত অনুমতিপত্র।প্রিন্টিং প্রেস এবং আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে- ডেপুটি কমিশনারের(ডিসি) কার্যালয় থেকে প্রদত্ত অনুমতিপত্র। রিক্রটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে-মানবসম্পদ রপ্তানী ব্যুরো থেকে প্রদত্ত লাইসেন্স।

আরও পড়ুন: আমরা যেন শিক্ষিত বেকার তৈরি না করি: শিক্ষামন্ত্রী

এছাড়া ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। অন্য সব ব্যবসার মতো সাধারণ ধাপ এখানেও অনুসরন করা হয়। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন সাধারণত গেজেট (Gazette) অনুসরণ করে লাইসেন্স কতৃপক্ষ ব্যবসার ধরন বা ফি নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু গেজেটে ইকমার্সকে আলাদা ব্যবসার ধরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি সেক্ষেত্রে এই ধরণের ব্যবসায়গুলো আই টি সার্ভিস বিবেচনায় নিবিন্ধিত হতে দেখা যায়।

এর বাইরে কেউ যদি বড় ক্যাপিটাল স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করতে চায় বা কোম্পানী শুরু করতে চায় সেক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারেন। এ ব্যতিত ট্রেড লাসেন্স নিয়ে যে সকল সাধারণ তথ্য বিবেচনায় রখা যেতে পারে সগুলো হলোঃ

• একটি সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সে ৩টি ঠিকানা দরকার হয়(ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা)।
• ট্রেড লাইসেন্সে বিজনেস এড্রেস পরিবর্তন করা যাবে সেক্ষেত্রে নতুন এড্রেসের ডিড থাকলে সেটি প্রয়োজন হবে।

• স্থানীয় সরকারের এক ইউনিটের ইস্যু করা ট্রেড লাইসেন্স অন্য ইউনিটে ব্যবহার করা যাবে না।
• ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তির খরচ নির্ভর করে ব্যবসার ধরণের উপর(গেজেট অনুসারে নির্ধারণ করা হয়)।

• ব্যবসার ধরনে তারতম্য হলে ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
• ব্যবসার ধরন আমদানি-রপ্তানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স করতে হবে।

• ব্যবসার বৈধতা নিশ্চিত করতে নিয়ম অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স হালনাগাদ করতে হবে।
• হালনাগাদের প্রকৃয়া যথাযথ থাকলে ব্যাংক লোন পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।
• একটি ট্রেড লাইসেন্স একটি প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য হবে এবং এটি বিক্রয় যোগ্য নয়।

• যদি কোনো NGO লাভজনক কোনো প্রকল্প নিয়ে কাজ করে তাহলে ট্রেড লাইসেন্স প্রযোজ্য হবে।
• ট্রেড লাইসেন্স হারিয়ে গেলে নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে এবং এর কপিসহ টেড লাইসেন্সের কপি পাওয়ার জন্য পুনরায় আবেদন করা যাবে।

সঠিক ট্রেড লাইসেন্স করা থাকলে একজন তরুণ উদ্যোক্তা নানাবিধ সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রথমত, এটি একটি ব্যবসায় এবং তার লেনদেনকে বৈধতা দেয় এবং পরবর্তীতে ব্যাংকে বিজনেস একাউন্ট ওপেনিং, ভ্যাট, আমদানি লাইসেন্স, ব্যাংক লোন সংক্রান্ত সহায়তা বা সরকার প্রদত্ত ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে। যার ধারাবাহিকতায় একজন তরুণ উদ্যোক্তা ধিরে ধিরে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।

পরিশেষে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখতে উদ্যোগ ভাবনার বিকল্প নেই। সাবলম্বি হতে এবং দেশের বেকারত্ব নিরসনে তাই বিকল্প হিসেবে অনেক তরুণ এবং তরুনী বেছে নিচ্ছেন সৃষ্টিশীল ব্যবসার পথ বা উদ্ভাবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং এই দীর্ঘ যাত্রার টিকেট হতে পারে একটি সঠিক ট্রেড লাইসেন্স।

লেখক: প্রভাষক, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়