পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়
পড়তে বসলেই ঘুম আসে। আজগুবি সব চিন্তায় সময় চলে যায়। একের পর এক বইয়ের পাতা উল্টালেও পড়ায় মনোযোগটা আর হয়ে উঠে না। এভাবেই কেটে যায় দিনের পর দিন। কিন্তু পরীক্ষার সময় বাড়ে চাপ। কি করব বুঝতে পারি না। কোনটা রেখে কোন বই পড়ব, সেই চাপে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়া দায়। অবশেষে যা-তা পড়াশোনা করেই দিতে হয় পরীক্ষা, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলে বাড়ে হতাশা।
এটা স্বাভাবিক কোন হতাশা নয়! এর ফলে বদলে যায় অনেকের জীবনযাত্রার পথ। কেউ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে না পেরে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কেউ আবার পড়াশোনার ইতি টেনে কর্মযজ্ঞে পা বাড়ায়। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার ব্যতিক্রম ঘটলে ছন্দহীন হতে পারে চলার পথ। সুতরাং আপনার পড়াশোনার যদি এমন অবস্থা হয়, তবে জেনে নিন সমাধানের উপায়-
পড়ার মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি
পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে একটি মনোরম পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে নিজের মধ্যে একটি সন্তুষ্টিবোধ কাজ করে। ফলে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে খুব দ্রুতই মনোযোগ বাড়ে। তাই পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এবং সেই জায়গায় পড়াশোনা করে আপনি আত্মতৃপ্তিবোধ করেন। কেননা এই মনোভাবটা মস্তিষ্কে সেট হলে পড়াশোনা মনোযোগ বাড়বে।
রুটিন জীবন অতিবাহিত করুন
যাই বলুন না কেন, রুটিন জীবন আপনার সময় ও কাজকর্মকে সহজ ও আনন্দময় করে তুলতে সহায়ক। তাই দিনের কাজকর্ম ও পড়াশুনার একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা জরুরি। তবে প্রতিদিন যে রুটিন অনুযায়ী সব কাজ শেষ হবে এমনটা না। কিন্তু দিনের যখনই আপনি পড়াশোনার জন্য বসবেন, তখন মস্তিষ্ককে অন্য চিন্তা থেকে দূরে রাখতে হবে। তবে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে সময়ের কাজ সময়ে করার। কারণ যে কাজ পরে করবেন ভেবে রেখে দিবেন, তা কিন্তু পরেও আর হবে না। আর সেটা আপনি খুব ভালোভাবেই জানেন!
পড়ার সময় যেকোন ডিভাইস দূরে রাখুন
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে শুরু করে যুবক ও বৃদ্ধ পর্যন্ত স্মার্ট ডিভাইস তথা মোবাইল, ট্যাব বিংবা ল্যাপটপে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আনন্দ, বিনোদন কিংবা সরাসরি যোগাযোগের চেয়ে সবাই ভার্চুয়ালি কানেক্টেড থাকতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে এই ডিভাইস গুলো মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে পড়েছে। তাই এসবের প্রভাব পড়াশোনাতেও পড়ছে। কেননা ফেনটি পাশে রেখে পড়তে বসে, টুং করে একটি টেক্সট কিংবা কোন নোটিফিকেশন আসলে পরক্ষণেই মনোযোগ চলে যায় সেদিকে। তারপর খোশগল্প কিংবা কোন তথ্য দেখতে স্ক্রোলিং করতে গিয়ে চলে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। তারপর আর নতুন করে পড়ার ইচ্ছে হয় না। ফলে চলে যায় সেই দিন। এভাবে সপ্তাহ, এমনকি মাস চলে যায় পড়ার টেবিলে মনোযোগ আর দেয়া হয়ে উঠে না৷ তাই পড়ার সময় এসব জিনিস নাগালের বাহিরে রাখাই শ্রেয়।
আরও পড়ুন: ১০টি টিপস আপনার চাকরি নিশ্চিত করতে পারে
সাম্প্রতিক হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির করা একটি গবেষণা প্রকল্প অনুসারে, আমরা যখন একটি সোশ্যাল মিডিয়া টেক্সট পাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সেই দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেজন্য মূলত ডোপামিন নামক রাসায়নিক উপাদান দায়ী। কেননা খাদ্য, ব্যায়াম ও গেমিং সহ আমরা যা পছন্দ করি, সেগুলোর সাথে ডোপামিন যুক্ত। তাই অধিক পছন্দনীয় কোন জিনিসের এলার্ট পেলে ডোপামিন আমাদের মনোযোগ সেই দিকে ধাবিত করে।
জানার আগ্রহ নিয়ে পড়ুন
শুধুমাত্র পাশ করতে হবে দেখে পড়ার চেয়ে জানার জন্য পড়ুন। দেখবেন বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। কারণ যখন আপনি কোন বিষয়ে জানার জন্য পড়বেন, তখন সেই বিষয়ে আপনার মনোযোগ আরো গভীর হবে। তাছাড়া স্বভাবতই অজানার প্রতি মানুষের কৌতূহল বেশি থাকে। তাই জানার আগ্রহ নিয়ে পড়লে, সেটাতে আগ্রহ বেশি হবে এবং সেটি দীর্ঘদিন স্মৃতিতে সংরক্ষিত হবে।
পড়ায় নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেন
পড়ার ক্ষেত্রে নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ ভালো না লাগা কোন টপিক জোর করে আত্মস্থ করতে চাইলে বেশি মনোযোগ দেয়া যায় না। বরং সেই মুহুর্তে যা পড়তে ভালো লাগছে, সেটাই পড়লে বেশি মনোযোগ দেয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু বাড়াবেন যেভাবে
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
শরীর চর্চা দেহ ও মন দুটোকেই সতেজ রাখে। ফলে যেকোন কাজে একাগ্রতা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম শুধুমাত্র শরীরের জন্যই নয়, আপনার মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। কারন ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এমনকি নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে সামগ্রিক মেজাজ এবং ঘুমের উন্নতি হয়। ফলে স্ট্রেস ও উদ্বেগের উপসর্গগুলি হ্রাস পায় এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোন কাজে মনোনিবেশ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন: ‘বড় বড় স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবেন না’
একটি স্টাডি গ্রুপ তৈরি করুন
পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধির আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো দলবদ্ধ পড়াশোনা। কেননা এতে একে অন্যের সৃজনশীল, বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের গভীরতা যুক্ত। পারস্পরিক জ্ঞান চর্চার ফলে যখন এসব সৃজনশীল চিন্তার আদানপ্রদান ঘটবে, তখন পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া গ্রুপে ছোট ছোট প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকে রাখতে অধিক পড়াশোনা করতে হবে। সেজন্য পড়ায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করে নিজের সৃজনশীল চিন্তার প্রসার ঘটাতে আগ্রহ জন্মাবে।