তিন মাসের প্রস্তুতিতে আমি যেভাবে রাবিতে চান্স পেয়েছিলাম

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা   © সংগৃহীত

আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি সেটা হচ্ছে- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি নয়। কি ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন?  কারণ সবাই পরিশ্রম করে। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পড়ে। পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলে কিন্তু তারপরেও সফল হয় না।

তাহলে কি সমস্যা? সমস্যা হচ্ছে আমাদের চিন্তাধারায়। আসলে আমরা সবাই পরিশ্রম করি কিন্তু কেউ কৌশলী পরিশ্রম করি না। সঠিক বাক্য হচ্ছে- কৌশলী পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। তাই আপনাকেও সফল হতে হলে প্রথমে কৌশলী হতে হবে। আমি যখন পরীক্ষা দেই মাত্র ৩ মাস সময় পেয়েছিলাম প্রস্তুতি নেবার জন্য।

কি কি কৌশল অবলম্বন করেছিলাম তা আপনাদেরকে বলবো কিন্তু তার আগে প্রথমেই দরকার ইচ্ছাশক্তি। আপনি যতই কৌশলী হন না কেন যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি না থাকে, তাহলে আপনি হোঁচট খাবেন মাঝপথে। এখন ইচ্ছাশক্তি কেমন হওয়া উচিত? 

এর জন্য একটি গল্প বলি আপনাদের। এক ছেলে একজন গুরুর কাছে গিয়ে বলল- আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে চাই, আমাকে কি করতে হবে? গুরু সেই ছেলেটিকে নিয়ে একটি পুকুরে নামলেন। তারপর সেই ছেলেটির কাঁধে যাতা দিয়ে পানিতে চুবিয়ে রাখলেন। ছেলেটি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানির উপরে মাথা তুলার জন্য।

অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর সে হ্যাঁচকা টান দিয়ে পানির উপরে মাথা তুলতে সক্ষম হল। উঠেই সে গুরুকে বলল- আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিব না কারণ আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন। গুরু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- এটাই তোমার প্রথম শিক্ষা। 

এরপর ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন- আমি যখন তোমাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে রাখলাম তখন তোমার একমাত্র ইচ্ছা কি ছিল সেই মুহূর্তে? ছেলেটি বলল- তখন আমার একমাত্র ইচ্ছা ছিল যে করেই হোক পানির উপরে মাথা তোলা এর জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।

তখন গুরু বললেন- শিক্ষার জন্য তোমাকে এমন ইচ্ছা শক্তি প্রথমে অর্জন করতে হবে। তাহলে তুমি শিখতে পারবে। ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য আপনাকে প্রথমে ইচ্ছাশক্তি অর্জন করতে হবে। আর ইচ্ছাশক্তি অর্জন করতে পারলে- আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পড়বেন কেউ আপনাকে বলে দিবে না পড়ার কথা।

তাই প্রথমে ইচ্ছাশক্তি ঠিক করুন যে- আমাকে যে করেই হোক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় চান্স পেতে হবে আর এজন্য আমি পরিশ্রম করতে রাজি আছি। এরপর পরিশ্রমের কৌশল ঠিক করুন।

নৈর্ব্যক্তিক কিভাবে পড়বেন?

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন এমন একটি জিনিস তা আপনি যতই পড়বেন আপনি তা ততই ভুলে যাবেন। এগুলো পড়ার কিছু নিয়ম আছে যা আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুসরণ করি। পরীক্ষার হলে আপনি যখন বসবেন তখন চারটি উত্তর এর ভিড়ে আপনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভেতর যারা কনফিউজড না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারবেন তারাই সফল হবেন। 

যেভাবে পড়বেন
১। শুধু উত্তর পড়ুন: অনেকেই অপশনসহ প্রশ্নের উত্তর পড়তে দেখি এতে আপনি বেশি কনফিউজড হবেন। প্রথমে প্রশ্ন পড়ুন এরপর এর উত্তর। অন্য কি অপশন আছে সেটা দেখার দরকার নাই।

২। নিজেকে পুরস্কৃত করুন: নিজের ভেতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করুন। এভাবে নিজেকে বলুন আমি যদি এই প্রশ্নের উত্তর গুলো এখন বলতে পারি। তাহলে আমার প্রিয় কোন খাবার খাব। নিজেকে পুরস্কৃত করলে নিজের ভেতর স্পৃহা বাড়ে।

৩। অন্যকে প্রশ্ন ধরুন: বন্ধুদের সাথে যখন আড্ডা দিবেন তখন একে অপরকে নৈর্ব্যক্তিক জিজ্ঞেস করুন। এই আড্ডার সময় যে জিনিসগুলো পড়া হবে তা বেশি মনে থাকবে।

৪। পরীক্ষা দিন নিজে নিজে: বাসায় ঘড়ি ধরে পরীক্ষা দিন। এতে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক হবে। অনেকেই সময়ের কারণে সম্পূর্ণ উত্তর দিতে পারে না।

৫। খাতা ব্যবহার করুন: আমি খাতায় কঠিন শব্দগুলো টুকে রাখি বা সারাদিন কি কি পড়বো তা লিখে রাখি। এতে নিজের ভেতর একটি তাড়না কাজ করে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ