দ্রুত পড়া বোঝার গোপন কৌশল
- মো: শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২২, ০১:৩৪ PM , আপডেট: ০২ জুন ২০২২, ০১:৩৪ PM
পড়া বোঝার চেষ্টা আমরা সকলেই কমবেশী করে থাকি, কিন্তু কিছু দুর্বোধ্য শব্দের কারণে অনেকেই সম্পূর্ণ বুঝতে পারি না। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। সবারই পড়া মনে রাখা নিয়ে সমস্যা। কারন বেসিক নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। ক্ষুধার্থ বাঘের মতই বই নিয়ে আমরা গিলে খেতে চেষ্টা করি কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা তা পারিনা, তার কারণটা হলো আমাদের গোড়ায় গলদ অর্থ্যাৎ বেসিক দুর্বল।
তাই আমাদেরকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমেই সেই পড়ার বেসিক জানতে হবে। তাহলে পড়াশোনা এমনিতেই বুঝা যাবে। আর যাদের বেসিক ভালো তারা অল্প সময়ে পড়া শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা ও পর্যাপ্ত ঘুম দিতে পারে।
আমরা নিচের কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে দ্রুত পড়া বুঝার কৌশল ধরতে পারবো। দ্রুত পড়া বুঝার গোপন কৌশলগুলো নিম্নরূপ-
১. প্রশ্নগুলো তৈরি করুন: একটি অধ্যায় পাঠের পর পাঠকের মনে যে সকল প্রশ্নের জন্ম নেবে সে গুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। যেমন বর্তমানে কি ঘটতে পারে বা ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে। সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রশ্ন জড় করে তার উত্তর খোঁজা। এই কাজটি মূল উপাদানের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে এবং উপাদানগুলির সাথে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে পারে।
২.স্মার্ট পড়া: যে কোন বিষয় পড়ার ক্ষেত্রে কি, কেন, পার্থক্য, ব্যবহার, সুফল- কুফল খুজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। এই সৃজনশীলতার কোন বিকল্প নাই। আর এভাবে পড়লেই শিক্ষার্থীর জানার আগ্রহ বাড়বে ও পড়াশোনার দ্রুত আয়ত্ব করতে পারবে।
৩. আওয়াজ করে পড়াঃ শিক্ষার্থীকে জোরে জোরে পড়া উচিত দ্রুত পড়া গুলো বোঝার বা আয়ত্ব করার জন্য। জোরে জোরে পড়ার পরে পড়া গুলো কথোপকথন সমর্থন করতে পারে যা শিক্ষার্থীকে জটিল সংযোগগুলি করতে সহায়তা করে।
৪. সহযোগিতামূলক কথা প্রচার করা: দ্রুত পড়া বোঝার জন্য যে বিষয়গুলো সহযোগিতা করে অর্থাৎ তথ্য উপাত্ত নির্ভর কথাগুলো বলতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা দ্রুত বুঝতে পারে। একটি পক্ষ পড়া জোরে জোরে পড়বে আর অন্য পক্ষ তা শুনার মাধ্যমে তার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে অর্থাৎ দ্রুত আয়ত্ত করতে পারবে।
৫. গল্পের গঠনে মনোযোগ: এটি একটি চমৎকার কৌশল যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী দ্রুততম সময়ের মধ্যে পড়া বুঝতে পারবে। সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি গল্পের অবতারনা করা যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অন্তরে গেথে নিতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে গল্পের কাঠামো, চরিত্র,চক্রান্ত,বিষয় বস্তু ইত্যাদি উপাদানগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. নোট বা টিকা রচনা পদ্ধতি: শিক্ষার্থী হাতে কাগজ কলম নিয়ে পড়তে বসবে। তারপর তারা যা কিছু ভবিষ্যৎবানী বুঝবে তা সবই নোট নিবে। তারা প্রশ্নগুলি লিখবে। তারা সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন এমন কোন শব্দের সাথে সামঞ্জস্যতা খুজে বের করবে। পরবর্তীতে এই নোট গুলো পড়ার মাধ্যমে তাদের দ্রুত পড়া বুঝতে সহায়তা করবে।
৭. চিহ্ন ব্যবহার করা: আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের পড়াশোনা গুলি কোন তথ্য চিত্রের মাধ্যমে পড়ে তাহলে তাদের ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনে জানা যায় ভিডিও ও অডিও ভিজিউল এর মাধ্যমে পড়াশোনা এবং দেখা অনেক কার্যকরি একটি পদক্ষেপ দ্রুত পড়া বুঝার জন্য।
৮. অন্যকে বোঝানোর কৌশল: আমরা যেটা জানি বা পারি তা অন্যকে বোঝানোর মাধ্যমে। এই পদ্ধতি যে কি পরিমান কার্যকর তা বলে বোঝানো যাবে না। অন্যকে বোঝানোর মাধ্যমে দ্রুত পড়া বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
৯. শর্ট নোট তৈরি করা: বইতে অনেক বড় করে লেখা তা পুরোটা মনে রাখা যায় না। তাই শর্ট নোট তৈরি করার মাধ্যমে দ্রুত পড়া বোঝা যায়।
১০. লেখা ও রিভিশন করা: পড়ার পর তা লেখার কোন বিকল্প নাই। একবার লিখলে তা ১০বার পড়ার সমতুল্য হয়। প্রতিদিন আমি যতটুকু পড়াশোনা করি তা যদি খাতায় লিপিবদ্ধ করি তাই হবে আমার সর্বাধিক কার্যকরি দ্রুত পড়া বোঝার কৌশল।
১১. সারমর্ম: শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত পড়াশোনা করে থাকে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে থামতে হয় এবং এই থামার পর যা পড়েছে তা সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনাগুলো পুনরায় অনুশীলন করে থাকে এবং দ্রুত পড়া বোঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
উপরোক্ত টপিকগুলো যদি একজন শিক্ষার্থী গুরুত্ব সহকারে অনুশীলন করে তাহলে তাদের পড়া দ্রুত বোঝার ক্ষেত্রে কোনো রূপ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে না। দ্রুত পড়া বোঝার ক্ষমতা যথাযথ মনোযোগ ও ব্যবহারিক কার্যাবলীর উপর নির্ভর করে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে তারতম্য হতে পারে।
লেখক: লেখক ও কলামিষ্ট এবং হেড অব অপারেশন ও সহকারী অধ্যাপক
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম।
ই-মেইল: mshahnewazmazumder@gmail.com