০১ এপ্রিল ২০২২, ২০:০৬

মেডিকেলে কোচিং করা শিক্ষার্থীদের প্রথম টার্গেট জাবির জীববিজ্ঞান অনুষদ কেন?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হতে সম্পূর্ন আলাদা। ভর্তি পরীক্ষায় সাধারনত অনুষদভিত্তিক, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একজন শিক্ষার্থী যে অনুষদের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিবে সেই অনুষদে যে সকল সাবজেক্ট থাকে তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থী কোন সাবজেক্টে বেশি পারদর্শী ও উচ্চশিক্ষার জন্য বেশি আগ্রহী তা সঠিকভাবে নির্বাচন করা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের কথাটাই বলি, এখানে মূলত শিক্ষার্থীরা ৭ টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পায়। বিষয়গুলো হল- ফার্মেসি, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, অনুজীববিজ্ঞান, জীবপ্রযুক্তি ও জীনপ্রকৌশল, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান।

আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল সোমবার!

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এ সকল সাবজেক্টে ভাল করতে হলে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভাল জানতে হবে জীববিজ্ঞান যার জন্য ভর্তি পরীক্ষার ৮০ মার্কের ৪৪ মার্কই জীববিজ্ঞান থেকে করা হয়। তারপর রসায়নবিজ্ঞান যেখান থেকে ২৪ মার্ক করা হয়। এগুলোর পাশাপাশি তাদের সাধারন বিষয়গুলোর জ্ঞানের প্রতি নজর রেখে বাংলা থেকে ০৪ ও ইংরেজি থেকে ০৪ মার্ক দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক দক্ষতা যাচাই করার জন্য আইকিউ থেকে ০৪ মার্ক দেয়া হয়। শুধু এই অনুষদ নয় অন্যান্য অনুষদেও একইভাবে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়।

কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন জীববিজ্ঞান অনুষদের?
যেহেতু বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক বায়োলজি ও রসায়ন থেকেই প্রশ্ন আসে তাই এই দুই বিষয়ের মেইন বইগুলো ভাল করে পড়া উচিত।

এখন প্রশ্ন হল-কোন লেখকের বই পড়বেন?
বিগত ৮ বছর শুধু জাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের গাইডলাইন দিতে গিয়ে আমি যেটা লক্ষ্য করেছি উদ্ভিদবিজ্ঞান সাধারনত আবুল হাসান স্যার ও প্রাণিবিজ্ঞান গাজী আজমল স্যারের বই থেকেই সরাসরি প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু ব্যাতিক্রম রসায়ন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ধরাবাধা লেখকের বই থেকে আমরা বিগত সালের প্রশ্ন প্রতিবছর কমন পাইনি। একেক বছর একেক লেখকের বই থেকে প্রশ্ন করা হয়।

যেমন ধরুন, ২০২১-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রশ্নের রসায়ন ১ম পত্র প্রশ্ন করা হয়েছে সজ্ঞিত কুমার গুহ স্যারের বই থেকে অন্যদিকে রসায়ন ২য় পত্রের প্রশ্নগুলো রবিউল ইসলাম স্যারের বই থেকে করা হয়েছে। অথচ এর আগের বছর হাজারী ও নাগ স্যারের বই থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন করা হয়েছে বলতে বুঝিয়েছি আমরা সবগুলো সেটের প্রশ্ন এনালাইসিস করে যে বই থেকে সরাসরি ও সর্বাধিক প্রশ্ন এসেছে সেটিকে বুঝিয়েছি। তার জন্য রসায়নের ক্ষেত্রে যে কোন একটা লেখকের বই ভালভাবে পড়ে বাকিগুলোর অতিরিক্ত তথ্য জেনে রাখা ভাল। সেক্ষেত্রে আমি হাজারী ও নাগ স্যারকে ফলো করতে বলবো।

বাংলা, ইংরেজি ও আইকিউ এর জন্য আপনারা বাজার থেকে ভাল বিশ্বস্ত কোন প্রকাশনীর একটি প্রশ্নব্যাংক কিনে সেগুলো যে যে টপিক থেকে এসেছে ওই টপিকগুলো ভাল করে আয়ত্ত করলে হবে কারণ ঘুরে ফিরে ওই গুলোই পরীক্ষায় আসে।

আরও পড়ুন: ‘কত কার-বাস চলে গেল, মীমের লাশ নিয়ে গেলেন গরীব রাজমিস্ত্রী’

কারা সাধারনত এই অনুষদে বেশি চান্স পায়?
মূলত এই অনুষদে মেডিকেল কোচিং করা স্টুডেন্টরাই বেশি চান্স পায়। তবে মনে রাখতে হবে এখানে মোট সিট ৩২০ টি মাত্র। তাই সব মেডিকেল কোচিং করা শিক্ষার্থীরা চান্স পাবে না। মেডিকেলের কোচিং করেছে কিন্তু জাবির প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে ভাল ধারণা আছে তারাই মূলত এখানে ভাল করবে। শুধু যে মেডিকেল কোচিং করা স্টুডেন্টরা চান্স পাবে তা কিন্তু নয়। যাদের প্যাশন জাবির ডি এবং সে অনুযায়ী পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নেয় তারাও অনেক ভাল করে।

জাবির বিশেষ শিফটপদ্ধতি
হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগরের এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি। যদিও এটি প্রশ্নবিদ্ধ অনেকের কাছে তারপরও এখানে যারা চান্স পায় তারা কোনভাবে অযোগ্য নয়। আসন কম থাকার জন্য হয়তোবা তার মত সমমানের আরেকজন চান্স পাচ্ছে না কিন্তু যে পেয়েছে সেও যোগ্য।

জীববিজ্ঞান অনুষদের কথাটাই বলি, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এই অনুষদের জন্য ১০ টি শিফটে দুদিন ধরে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ৬৯,১২৯ জন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। গতবারই প্রথম জিপিএ হঠাৎ করে ৮.৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯.০ করা হয় তারপরও এত শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। এত শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে একবারে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব। অন্যদিকে সবাইকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সিলেকশন পদ্ধতিতেও যেতে পারে না। গতবছর সিলেকশন পদ্ধতিতে গিয়ে প্রতি ইউনিটে মাত্র ১৮০০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা জাবিয়ান ও সাধারন শিক্ষার্থীদের দাবীর মুখে বাঞ্চাল হয়ে যায়।

তাহলে আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েও কিভাবে এক মেরিট তৈরি করা হয়?

আমি বিগত বছরের সবগুলো সেটের প্রশ্ন নিয়ে এনালাইসিস করে যেটা পেয়েছি স্যাররা যখন প্রশ্ন করে তখন বিশেষ প্যাটার্ন মেইনটেইন করে। যখন প্রশ্ন করা হয় তখন সাধারনত কোন অধ্যায়ের একই টপিক বা অধ্যায় থেকে সবগুলো সেটে সমধর্মী প্রশ্ন করা হয়। যেমন ধরুন যদি পরিপাক এনজাইম থেকে প্রথম শিফটে প্রশ্ন হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরবর্তী সেটগুলোতে এই টপিক থেকে প্রশ্ন হয়। একই টপিক থেকে তখনই এ রকম হয় যখন টপিকটা বড় হয়।কিন্তু কোন অধ্যায়ের যখন টপিকগুলো ছোট থাকে তখন পুরো অধ্যায়টাকে একটি টপিক ধরে সবগুলো সেটে পুরো অধ্যায়ের বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রশ্ন করা হয়।

কিন্তু আপনার যদি পুরো বইয়ের উপর সম্পূর্ন আয়ত্ত না থাকে তাহলে আপনি এখানে ভাল করতে পারবেন না। এর কারন হল গত বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য ৮০ মার্কের পরিবর্তে ৬০ মার্কে পরীক্ষা নেয়া হয় যার ১৬ টি ছিল উদ্ভিদ বিজ্ঞান থেকে।এখন প্রতি শিফট থেকে ১৬ টি করে মোট ১০ শিফটে ১৬০ টি প্রশ্ন শুধু উদ্ভিদ বিজ্ঞান অংশ থেকে করা হয়েছে। আপনার শিফটে এই ১৬০ টি প্রশ্নের কোনটি কোথা থেকে আসবে আপনার বুঝতে বেশ কষ্টই হবে।তাই সম্পূর্ন বই ভালভাবে না জানা থাকলে এখানে চান্স অসম্ভব কারণ আসন সংখ্যা মাত্র ৩২০। এক্ষেত্রে ১ মার্কের জন্যই আপনি বিচ্যুৎ হয়ে যাবেন।

কিভাবে হবে এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা?

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২ এ জাবির একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষা মন্ত্রনালয় হতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক প্রাপ্ত দুটি প্রস্তাবনার বিষয়ে আলোচনা হয় । যার একটি ছিল সেকেন্ড টাইম রাখার বিষয়ে অন্যটি ছিল শর্ট সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যই প্রস্তাবনা দুটির পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই শর্ট সিলেবাসেই জাবির পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সবাই শর্ট  সিলেবাসই পড়ুন। আর ০১.০৪.২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ফুল সিলেবাসে থাকলেও শর্ট সিলেবাসকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে জাবিতে তো বলেই দিছে এ ব্যাপারে।

যেহেতু শর্ট সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা হবে তাই আগের শিফট পদ্ধতি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা হলে জাবির ডি ইউনিটে (জীববিজ্ঞান অনুষদ) যদি এ বছর সর্বনিম্ন ১০ শিফটেও পরীক্ষা হয় তাহলে ১০×৮০=৮০০ প্রশ্নের জন্য প্রশ্নগুলো হয়তো বইয়ের ভিতরের বেশি গভীর থেকে করা হয়ে যাবে।এজন্য এ বছর চান্স পেতে হলে বেসিক ক্লিয়ার করে শর্ট সিলেবাসকে ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করতে হবে। অন্যথায় চান্স পাওয়া অসম্ভব।

একটা কথা মনে রাখবেন, জাবির ডি ইউনিটে তারাই চান্স পায় যারা কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে মূল বইকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ ধারনা রাখে। চরম প্রতিযোগীতার এই ইউনিটেই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেয় ৬৯,১২৯ জন যেখানে আসন মাত্র ৩২০ জন। গতবছর প্রতি আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল প্রায় ২১৬ জন। নিজেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে এখন থেকেই জোর প্রস্তুতি শুরু হোক।

আর যারা মেডিকেলের কোচিং করেছেন তাদের জন্য অনেক সহজ এখানে চান্স পাওয়া। একটি প্রশ্নব্যাংক কিনে প্রশ্ন সম্পর্কে ধারনা নিয়ে এখন থেকেই কনসেপ্ট ক্লিয়ার করলে আপনাকে আর ঠেকায় কে!

লেখক- সাবেক শিক্ষার্থী, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।