ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা: ‘ডি’ ইউনিটে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় আসলে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। আজ থেকে দুই বছর আগে আমিও ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আল্লাহর রহমদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। আমার ভর্তি প্রস্তুতির সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবারের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি। শেষ মুহূর্তে এসে পরামর্শগুলি অনেকেরই কাজে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলা:
বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের গদ্য এবং পদ্য উভয় অংশের খুঁটিনাটি সকল বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বাংলা প্রশ্নের এ অংশে পাঠ্যবইয় থেকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই যে শিক্ষার্থী পাঠ্যবই যত ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবে তার এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। বাংলা প্রশ্নের অন্য একটি অংশ হলো-ব্যাকরণ। ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র বইটি আন্ডারলাইন করে পড়তে হবে। এই বইটি থেকে খুঁটিনাটি সকল বিষয় আয়ত্ত করতে হবে।
কোনো শিক্ষার্থী যদি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র বই দুটি খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে তাহলে ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা অংশে সে হয়ত শতকরা আশি থেকে নব্বই ভাগ প্রশ্ন কমন পাবে বলে আমার বিশ্বাস। বাকি অংশটুকু কমন পাওয়ার জন্য অন্য অনেক বই পড়া যেতে পারে। তবে এই শেষ মুহুর্তে এসে শিক্ষার্থীদের এসব বই পড়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ থাকবে কারণ এবারের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পুরোপুরি বোর্ড বই কেন্দ্রীক করা হবে। কাজেই এই মুহূর্তে বোর্ড বইয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেই সাথে আর একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, শতভাগ প্রশ্ন কখনোই কমন আসবে না এইটা মাথায় রেখেই প্রশ্নকর্তা ব্যাক্তিবর্গ প্রশ্ন করে থাকেন। কাজেই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সামর্থের সবটুকু দিয়ে প্রিপারেশন নিয়ে যেতে হবে।
ইংরেজি:
ইংরেজির ক্ষেত্রে বাংলার মতো একই পরামর্শ থাকবে। প্রথমে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ইংরেজি প্রথম পত্র বই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। তোমরা যদি কেউ এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ইংরেজি অংশ এনালাইসিস করো তাহলে দেখতে পাবে যে ইংরেজি অংশের প্রায় শতভাগ প্রশ্নই পাঠ্যবই কেন্দ্রীক করা হয়েছে। তাছাড়া এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপ্রত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রীক করা হবে তার ঘোষণা কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই দিয়েছেন। কাজেই সময় নষ্ট না করে হাতে যে কয়দিন সময় পাও পাঠ্য বইয়ের প্রতি মনোযোগী হও।
পাঠ্যবইয়ের খুঁটিনাটি সকল বিষয় আয়ত্ত করে নাও। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "ডি" ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শতকরা প্রায় পঁচাশি থাকে নব্বইভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়। পাশ করে মাত্র শতকরা দশ থেকে পনের ভাগ শিক্ষার্থী। প্রশ্ন হলো এর পেছনে মূল কারণ কি? মূল কারণ হলো প্রশ্নপত্রের ধরণই অধিকাংশ শিক্ষার্থী বুঝতে পারে না। কৌশল অবলম্বনে তারা পিছিয়ে পড়ে। মনে রেখ, অধিক পড়াশোনাই কেবল চান্স পাওয়ার জন্য পর্যান্ত নয় বরং পড়াশোনার পাশাপাশি কৌশল অবলম্বন করাও শিখতে হবে। আর এবছরে চান্স পাওয়ার কৌশল হলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ইংরেজি প্রথম পত্র পাঠ্যবইটাকে পুরোপুরি আত্মস্থ করা। যেটাকে ট্রাম্প কার্ড বললেও বোধকরি ভুল হবে না। যদি পাঠ্যবই আয়ত্ত করতে পারো, তাহলে আশা করা যায় তুমি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করবে।
সাধারণ জ্ঞান:
সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য স্পেশাল কোন টিপস দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ এই অংশটি নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস কেন্দ্রীক নয়। সাধারণ জ্ঞান হলো বিশাল জলরাশির সমুদ্রের মতো যা শেষ হবার নয়। তাই এই অংশের জন্য ফিক্সড কোনো সাজেশন্স দেওয়া সঠিক হবে না মনে করি। তবুও একটু হিন্টস দিই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো কয়েকবার সলভ করতে হবে। একাধিকবার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করলে কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন করা হয় তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বাজারে প্রচলিত ভালো একটি সাধারণ জ্ঞান বই থেকে সেই টপিকগুলির খুঁটিনাটি সকল বিষয় পড়ে ফেলো। সাধারণ জ্ঞানের মৌলিক বিষয়াবলিগুলো বারবার রিভিশন করতে হবে। সেই সাথে সাম্প্রতিক কালের ঘটমান বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবে।
প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "ডি" ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে সাম্প্রতিক বিষয়াবলী থেকে অনেক প্রশ্ন হয়ে থাকে। সেগুলোর উত্তর করতে না পারলে হয়ত পিছিয়ে পড়তে হবে। এজন্য দেশ এবং বৈশ্বিক উভয় পর্য়ায়ের ঘটমান বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়াবলীর উপর বাজারে "রিসেন্ট ভিউ" নামে একটি বই বের হয়েছে। চাইলে সেটি থেকেও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
পরীক্ষার হলে করণীয়:
পরীক্ষার হলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো নিজের মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখা। এ সময় ব্রেইনে অতিরিক্ত চাপ অনুভূত হয় ফলে সহজ প্রশ্নগুলোও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি যে ট্রিকসটি ফলো করেছিলাম তা তোমাদের সাথে শেয়ার করছি। প্রথমে সাধারণ জ্ঞান এরপর বাংলা তারপর ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর করা।
সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা অংশের জন্য পরীক্ষার মোট সময়ের অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক সময় শুধুমাত্র ইংরেজির জন্য বরাদ্ধ রাখা। এতে করে ইংরেজি অংশের প্রশ্ন সমাধান করতে বেশ সময় পাওয়া যায় ফলে গ্রামাটিক রুলসগুলোর গুলিয়ে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। দৃঢ় আত্নবিশ্বাস, কঠোর অধ্যাবসায় এবং স্রষ্টার সাহায্য এই তিনটি জিনিস থাকলে তোমার স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে 'প্রাচ্যের অক্সফোর্ড' খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর কয়েকটা দিনের দূরত্ব মাত্র। কাজেই সময়টাকে কাজে লাগাও। ক্যাম্পাসটাকে নিজের করে নেওয়ার এইতো সময়। সকলের জন্য শুভকামনা রইল।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়