০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৫:১৯

‘গ’ ইউনিট ভর্তি প্রস্তুতি: ‘একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে’

নূর এ এলাহী চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে চান্স পাবার। ভর্তি পরিক্ষার মৌসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাবির ‘ক’ ও ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষাও সমাপ্ত হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে তোমাদের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। ‘সি’ ইউনিটে এবার ১২শ ৫০ সিটের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ২৭ হাজার ৩৭৪ জন। অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য ২১ জনেরও বেশী লড়াই করবে৷ সুতরাং যথেষ্ট প্রতিযোগিতামুলক ও গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য। এই লেখায় থাকছে ‘সি’ ইউনিট নিয়ে কিছু তথ্য ও পরামর্শ।

মানবন্টনঃ 

তোমরা ইতোমধ্যেই তোমাদের মানবন্টন জেনে গিয়েছ যে, এমসিকিউ অংশে ৫ টি বিষয় থেকে  (বাংলা, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ এবং মার্কেটিং অথবা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং) ১২ টি করে মোট ১২×৫=৬০ টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১ মার্ক। ভুল দাগালে .২৫ নম্বর কাটা যাবে। ইংরেজিতে ন্যূনতম ০৫ মার্ক পেতে হবে এবং সর্বমোট ২৪ পেলে পাস বলে গণ্য হবে।  এমসিকিউ অংশের জন্য সময় ৪৫ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি এমসিকিউ এর জন্য সময় পাবে মাত্র ৪৫ সেকেন্ড করে।

অন্যদিকে লিখিত অংশে থাকছে-

বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ- ৫×১=০৫

ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ- ৫×১=০৫

বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রকাশ (ইংরেজি)- ৫×১=০৫

Precis Writing, ১×৫ = ০৫

 সংক্ষিপ্ত রচনা (বাংলা) ১×৫= ০৫

৫টি আবশ্যিক বিষয় থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর ৫×৩= ১৫

মোটঃ ৪০ নম্বর

লিখিত অংশে ন্যূনতম ১১ পেলে পাস বলে গণ্য হবে৷ সময় বরাদ্দ থাকবে ৪৫ মিনিট।

এমসিকিউ ও লিখিত অংশ মিলে মোট ১০০ (৬০+৪০) নম্বরের মধ্যে ৪০ পেলেই পাস বলে গণ্য হবে।

 

সেইসাথে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে থাকছে (৫×২)+(৫×২) = ২০ মার্ক।

সর্বমোট পরীক্ষা হবে (৬০+৪০+২০)= ১২০ নম্বরের উপর।

      আরও পড়ুন: ঢাবি-জাবি-রাবি-চবি কিংবা গুচ্ছ— ইংরেজিতে ভাল নম্বর পাওয়ার কৌশল

টাইম ম্যানেজমেন্ট ও নেগেটিভ মার্কিংঃ

এমসিকিউ অংশের প্রতিটি প্রশ্নের জন্য মাত্র ৪৫ সেকেন্ড পাবে। সুতরাং এমসিকিউ ঘর পূরণের জন্য তোমাদের দক্ষ হতে হবে। বাজারে মডেল টেস্টের জন্য বিভিন্ন ধরণের বই পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করে কিংবা নিজেই ওএমআর শিট সংগ্রহ করে ঘর পূরণের অভ্যাস কর৷ বাড়িতে বসেই নিজে নিজে বেশী বেশী পরীক্ষা দাও এবং নিজেকে মূল্যায়নের চেষ্টা কর।

এমসিকিউ অংশে ভুল দাগালে ১ মার্ক তো নষ্ট হলোই সাথে তোমার একটা সঠিক উত্তরেরও .২৫ নম্বর কাটা যাবে। সেজন্য পুরোপুরি সঠিক উত্তর না জানা থাকলে সেই প্রশ্নে বৃত্ত ভরাট না করাই ভাল।

অন্যদিকে লিখিত অংশের জন্য তোমাকে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন লেখার চেষ্টা করবে এবং অপ্রাসঙ্গিক ও ঘুড়িয়ে-পেঁচিয়ে একই লেখা লিখে সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়টুকু লেখার চেষ্টা করবে।

পরীক্ষার আগের বাকি দিনগুলোতে করণীয়ঃ

'সি' ইউনিটের বাংলা বিষয়ের জন্য উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যবই ও নবম-দশম শ্রেণির ব্যকরণ বই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ এবং মার্কেটিং অথবা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এর জন্য পাঠ্যবই যথেষ্ট। একাউন্টটিং এর জন্যেও উচ্চমাধ্যমিক বই যথেষ্ট সেই সাথে  ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব কষতে পারার দক্ষতা তোমাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। পরীক্ষার আগের এই সময়টাতে এই চার বিষয়ের জন্য (বাংলা, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ এবং মার্কেটিং অথবা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং) বইটাই ভালোমতো রিভাইস কর,  সাথে কোনো হেল্পিং বই থাকলে সেগুলোর সাহায্যও নিতে পার।

এবার আসা যাক ইংরেজি অংশে। ইংলিশের জন্য এমসিকিউ অংশে তোমাকে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৫ পেতে হবে পাস করার জন্য। সেজন্যে ভোকাবুলারি ও প্রিপজিশন যতটুকু পড়েছ তার উপরেই গুরুত্ব দাও। সেগুলোই মনে রাখার চেষ্টা কর। এছাড়া মূল বইয়ের অনুচ্ছেদগুলো বারবার পড়বে ও বুঝতে চেষ্টা করবে। নতুন করে ভোকাবুলারি আর মুখস্ত করতে যাওয়া এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না৷ তাতে মানসিক চাপ বাড়বে।

লিখিত অংশের জন্য অনুবাদ করার দক্ষতা বাড়াতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদে আছে মোট ১০ মার্ক। ইংরেজিতে সংক্ষেপে ৫ টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যেটার জন্য তোমাকে ইংরেজি প্রশ্ন বুঝে সঠিক উত্তর করতে হবে। Precis Writing উত্তর করার জন্য বেশী বেশী করে ইংরেজি passage গুলো সলভ করতে হবে। বাংলা সংক্ষিপ্ত রচনা খুব একটা সমস্যা হবে না তোমাদের আশা করা যায়। আর ৫ টি আবশ্যিক বিষয়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য সঠিক সময় ব্যবস্থাপনায় সঠিক উত্তর করার চেষ্টা করবে৷ যার জন্য বেশী বেশী অনুশীলন প্রয়োজন এই কয়েকদিন।

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখবেঃ

মনে রাখবে যত ভালো প্রিপারেশনই নাও তোমার শরীর ও মনের উপর পরীক্ষা অনেকটা নির্ভরশীল। আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সময় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। অসুস্থ যেন না হয়ে যাও সেদিকে খেয়াল রাখবে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিবে৷ হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। অন্যের কথায় প্ররোচিত হয়ে হীনমন্যতায় ভোগা যাবে না। মনে রাখবে, আত্মবিশ্বাস ও সাহস তোমাকে একধাপ এগিয়ে রাখবে অন্যদের থেকে।

পরীক্ষার আগের রাতে করণীয়ঃ

অনেক দুশ্চিন্তা এই রাতে মাথায় আসতে চাইবে। সেগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যে বিষয়গুলো কঠিন লাগে সেগুলো একটু রিভাইস দেওয়ার চেষ্টা করবে৷ পরীক্ষার আগের রাতেই কলম, এডমিট কার্ড ও প্রয়োজনীয় কাগজ এবং জিনিসপাতি গুছিয়ে রাখবে। এডমিট কার্ডে থাকা বিধি-নিষেধগুলো একটু পড়ে নিবে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবেনা সেগুলো ভালোভাবে জেনে নিবে। রাতে ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করবে।

পরীক্ষার দিন করণীয়ঃ

পরীক্ষার দিন সকালে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবার চেষ্টা করবে৷ রাস্তায় এইদিনগুলোতে খুব জ্যাম থাকার সম্ভাবনা থাকে। পরীক্ষার কেন্দ্রে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করবে। ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। প্রশ্ন পাবার পর অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রাখবে। পরীক্ষার উত্তরপত্রে সঠিক ভাবে নিজের নাম ও অন্যান্য তথ্যগুলো দিবে। নিজের রোল ঠিকঠাকমতো লিখে ঘর পূরণ করেছ কী না যাচাই করে নিবে। যে বিষয়ের প্রশ্ন পড়ছ সেই বিষয়ের বৃত্ত ভরাট করছ কি না খেয়াল রাখবে। এই দেড় ঘন্টা সময় ঠান্ডা মাথায় সঠিক কাজ করতে পারলেই তোমার স্বপ্ন বাস্তব হবে, ইনশাআল্লাহ।

শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।