ভর্তি প্রস্তুতিঃ চুয়েট-রুয়েট-কুয়েট স্বপ্ন যাদের

এবারের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ব্যাতীত বাকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে
এবারের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ব্যাতীত বাকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে  © টিডিসি ফটো

আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রায় প্রত্যেক বাবা-মায়েরই স্বপ্ন থাকে সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে অনেকের ই স্বপ্ন থাকে নিজেকে বিশ্বমানের প্রকৌশলী হিসেবে বিশ্ব দরবারে দেখার। সে স্বপ্ন পূরন এর পথে প্রথম ধাপ হচ্ছে ভর্তি যুদ্ধে নিজের যোগ্যতার প্রমান দিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আসন নিশ্চিত করা।

তোমরা নিশ্চয়ই জেনে থাকবে এবারের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ব্যাতীত বাকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা “গুচ্ছ পদ্ধতিতে” হবে। অর্থাৎ বাকি ৩ টি প্রকৌশল বিশবিদ্যালয় এর ভর্তি পরীক্ষার জন্যে  একটি  পরীক্ষা-ই হবে। কেবল বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার জন্যেই প্রাকনির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে উত্তীর্ণ হতে হবে মূল ভর্তি পরীক্ষার জন্যে, যেখানে বাকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে কোনো প্রাকনির্বাচনী পরীক্ষা থাকছে না। ভর্তি পরীক্ষায় ক-গ্রুপে ৫০০ নম্বরের এমসিকিউ(MCQ) প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

আর খ-গ্রুপের স্থাপত্য বিভাগে অংকন ২০০ নম্বর সহ মোট ৭০০ নম্বর এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মানবন্টনঃ পদার্থ-১৫০ নম্বর, রসায়ন-১৫০ নম্বর, গণিত-১৫০ নম্বর, ইংরেজি-৫০ নম্বর। খ-গ্রুপের অংকন ২০০ নম্বর।

এখন শেষ মুহূর্তে যে যে বিষয় গুলোতে যত্নশীল হতে হবেঃ

মানসিক প্রস্তুতিঃ

~ মাথায় রাখবে, ভুল উত্তর করে সময় নষ্ট করার চাইতে উত্তর না করাই অপেক্ষাকৃত ভালো। তুমি নিশ্চিত না হয়ে সব কটি প্রশ্নের উত্তরের পরিবর্তে ৯০% প্রশ্নের সঠিক উত্তর ই করো।

~ যে যে টপিক ইতোপূর্বে পড়া হয় নি, এখন আর নতুন করে সেসব না ধরাই মঙ্গলজনক হবে। অর্থাৎ তুমি ১০০% সিলেবাস না পেরেও যদি ৯০% সিলেবাস ই ১০০% ভাবে পারো এটাই যথেষ্ট।

~ নিজের স্বাস্থের প্রতি অবশ্যই যত্নশীল থাকবে। ঠিক মতো ঘুমাবে। পরীক্ষার ১ সপ্তাহ আগে থেকে কোনো ভাবেই ৮ ঘন্টার কম ঘুমালে চলবে না। এই সময়ে শুধু সূত্র, তত্ত্ব/থিউরি এসব ঝালাই দেবে। প্রয়োজন বুঝে নিজের মত রিভিশন দেবে। কোনো মতেই বাড়তি চাপ নেওয়া বা নতুন পড়া ধরার দরকার নেই।

 বিষয় ভিত্তিক প্রস্তুতিঃ

ভর্তি পরীক্ষায় কোনো অধ্যায় কে কম গুরুত্বপূর্ণ বা বেশি গুরুতবপূর্ণ বলার সুযোগ নেই বা নিশ্চয়তা দেওয়ার ও সুযোগ নেই। তবে ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় কিছু কিছু থিউরি টাইপ প্রায় সব সময় ই একটু আধটু হলেও আসে। এছাড়াও বাদ বাকি সব অধ্যায় থেকেই কম বেশি সব সময় ই প্রশ্ন আসে। উল্লেখযোগ্য ভাবে এখানে কয়েকটি অধ্যায়ের বেশ কিছু টপিক সম্পর্কে বলা হলো-

পদার্থ বিজ্ঞানঃ

১/ প্রত্যেকটা টাইপ অনুসারে থিউরি গুলো রিভিশন দেবে। শুধুমাত্র সূত্র রিভিশন না দিয়ে এই সূত্র/ফরমূলা টা কোত্থেকে এসেছে সেই থিউরি টা মাথায় রাখার চেষ্টা করা টা সর্বোত্তম।

২/ ১ম পত্রে ভেক্টর; কাজ, ক্ষমতা, শক্তি; মহাকর্ষ এসব অধ্যায় থেকে প্রশ্ন কম বেশি সব সময় ই এসেছে ইতোপূর্বে। ভেক্টর চাপ্টার টা করার সময় এমন ভাবে করা উচিত হবে যাতে গণিত এর ভেক্টর টাও করা হয়ে যায়। “কাজ, ক্ষমতা, শক্তি” চাপ্টারে শক্তির রূপান্তর আর কার্যকর ক্ষমতা, মোট প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যাপারে ক্লিয়ার কন্সেপ্ট থাকা চাই।

৩/ “গতি” এবং “নিউটনিয়ান বলবিদ্যা” থেকে কিছু মিশ্রিত সমস্যা আসতে দেখা গিয়েছে ইতোপূর্বে। লামির উপপাদ্যের প্রয়োগ টা এই “নিউটনিয়ান বলবিদ্যা” চাপ্টারের  জন্যে পড়ে রাখা উচিত হবে।

৪/ “পর্যায়বৃত্ত গতি” এবং “তরঙ্গ” খুব ভালোভাবে ঝালাই করে নিতে হবে। অগ্রগামী তরঙ্গ, স্থির তরঙ্গ, উপরিপাতন, বিট, সুস্পন্দ-নিস্পন্দ বিন্দুর অবস্থান নির্ণয় এসব খুব ভালো ভাবে জানা থাকতে হবে।

৫/ ২য় পত্রে আলোক বিজ্ঞান অংশ-র কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে যাতে সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে।

৬/ “তাপ গতিবিদ্যা” অধ্যায়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্নো ইঞ্জিন এর কার্যক্রম, রেফ্রিজারেটর এর কার্যক্রম নিয়ে যাতে পরীক্ষার সময় দ্বন্দ না লাগে সে জন্যে খুব সতর্ক ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

৭/ স্থির তড়িৎ, চল তড়িৎ অধ্যায়ের জন্যে প্রচুর পরিমানে প্রাক্টিস এর কোনো বিকল্প নেই। কির্শফ এর সূত্রের সঠিক প্রয়োগ জানা চাই। এছাড়াও বিদ্যুৎ বর্তনীতে শান্ট এর ব্যাবহার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকতে হবে। বর্তনী/সার্কিট সলভ করে ফেলবে, যতটুকু সম্ভব চোখের সামনে যা পাবা তার সব গুলো।

৮/ “আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের সূচনা” অধ্যায়ের আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতা অংশ থেকে প্রশ্ন গুলো বুঝে শুনে প্রয়োগ করতে হবে। প্রসঙ্গ কাঠামোর মার প্যাঁচ টা সঠিক ভাবে ধরে নিতে হবে।

রসায়ন বিজ্ঞানঃ

১/ রসায়নপ্রেমী অনেকের কাছে “জৈব যৌগ” খুব মজার একটা ব্যাপার হলেও অনেকের কাছেই এই অধ্যায় পুরো বিভীষিকা। যাদের জন্যে এটা বিভীষিকা তাদের জন্যে আমার পরামর্শ- ইন্টারে যতটুকু পড়েছো ততটুকু ই ঝালাই দিতে পারো। অথবা তোমরা দেখে থাকবে কিছু বিক্রিয়া/থিউরি খুব ই ফেমাস মুখ হয়ে থাকে ভর্তি পরীক্ষায়। সেসব ফেমাস বিক্রিয়া/থিউরি গুলোই পড়তে পারো। বার বার প্রাক্টিস করতে ভুলবে না যেনো!

২/ ১ম পত্রে “গুণগত রসায়ন” অংশে ইলেকট্রন বিন্যাসের সব গুলো নীতি নিয়ে যাতে প্যাঁচ না লাগে তাই সঠিক ধারনা রাখা এবং দ্যাব্যতার নীতি সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা চাই।প্রায় প্রতি বছর এই অংশ গুলো থেকে প্রশ্ন আসেই অল্প বিস্তর হলেও।

৩/ বাদ বাকি অধ্যায় গুলো প্রায় সব গুলোই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম পত্রের “কর্মমুখী রসায়ন” এবং ২য় পত্রের “অর্থনীতিক রসায়ন” নিয়ে অনেকের ই সমস্যা থেকে থাকে। সেক্ষেত্রে এই অধ্যায় দুটোকে একবারে শেষ করা বা রিভিশন করার চাইতে ধাপে ধাপে ভাগ করে প্রত্যেক দিনের পড়ার সাথে অল্প কিছু টপিক নিয়ে মাথায় ঢোকানো যেতে পারে।

৪/ “পরিমানগত রসায়ন” অধ্যায়ে জারন-বিজারন বিক্রিয়া সমাধান, টাইট্রেশন সংক্রান্ত সমস্যা গুলো কম সময়ে সমাধান করতে হলে চাই প্রচুর পরিমান অনুশীলন।

উচ্চতর গণিতঃ

উচ্চতর গণিত অংশে একচ্ছত্র অনুশীলন ই কেবল সঠিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে পারে। এছাড়াও-

১/ গণিত অংশের প্রস্তুতিকে কত গুলো সেকশন সাবসেকশনে ভাগ করে নেওয়া উত্তম। ১ম পত্রের জ্যামিতি, ২য় পত্রের কণিক, ১ম পত্র ও ২য় পত্রের ত্রিকোণমিতি, অন্তরীকরন-যোগজীকরন এভাবে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে।

২/ “সম্ভাবনা” ও “বিন্যাস-সমাবেশ” এর প্রত্যেকটা টাইপ খুব ভালো ভাবে বুঝে করতে হবে।

৩/ এছাড়া “জটিল সংখ্যা”, “বহুপদী ও বহুপদীর সমীকরন”, “দ্বিপদী বিস্তৃতি”, “ফাংশন” এই অধ্যায় গুলো ও সমান ভাবেই গুরুত্ব দিতে হবে।

৪/ তোমরা চাইলে গণিত অংশের “স্থিতি বিদ্যা”-র পাশাপাশি পদার্থ বিজ্ঞানের বলবিদ্যার অংশের  প্রস্তুতিকেও ঝালাই করতে পারে।বলের ক্রিয়া বিন্দু, সাম্যাবস্থার লামির উপপাদ্যের প্রয়োগ, একাধিক বলের লব্ধি নির্ণয় এসব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টপিক।

৫/ এছাড়া বাকি অধ্যায় গুলোকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে অনুশীলন করতে হবে।

সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রেখে তাঁর করুনা প্রার্থনা করে যাও। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। বিজয় তোমার হবেই।

ইংরেজি: 

* একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর প্রথম পত্রের মূল বইটি

*Appropriate Prepositions

* Idioms and Phrases

* Parts of speech and their classifications, Voice, Narration, Comparison of Adjective, Double Comparison, Illogical Comparison, Subject-verb Agreement, Right forms of verbs, Conditionals, Causative Verbs, Subjunctive, Dangling Modifier, Tag Question, Parallel Structure, Redundancy, Embedded Questions.

শুভকামনায়: এস এম মুনাওয়ার মাহতাব,যন্ত্রকৌশল বিভাগ, চুয়েট


সর্বশেষ সংবাদ