প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার শর্ট সাজেশন

গাজী মিজানুর রহমান
গাজী মিজানুর রহমান  © ফাইল ছবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শুরু হবে বলে এমনটাই জানা যাচ্ছে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে। শীঘ্রই পরীক্ষা শুরু হবে শুনে অনেকেই চিন্তিত এই ভেবে যে, ‘এতো দিন তেমন কিছু পড়লাম না, এখন কীভাবে কী করব? আমি কীভাবে এতো অল্প ভালো প্রস্তুতি নিবো? কীভাবে পরীক্ষায় পাশ করতে পারব? আমি কি আসলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবো?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

২০২১ সালে সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ৩২ হাজার ৫৭৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের জন্য প্রায় ১৩ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেছেন।

প্রথমে আপনি ভুলে যান যে, কতজন চাকরির পরীক্ষা দেবে। আপনি শুধু নিজের প্রতি এই আস্থা রাখুন যে, ৩২ হাজার নয় যদি ৩২ জনও নিয়োগ দেয় তাহলে তাদের মধ্যে আমি একজন থাকব, ইনশাআল্লাহ।

এই কথা বলছি এই জন্য যে, মোট যে ১৩ লাখ প্রার্থী চাকরি জন্য আবেদন করেছেন তার অধিকাংশই আছেন এমন যে, কেবল চাকরি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জন্য শুধু এই পরীক্ষাটা দিচ্ছেন; চাকরি পাওয়ার জন্য নয়। আবার এমনও আছেন, যারা শুধু পরীক্ষার জন্যই পরীক্ষা দেবেন। তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বা প্রস্তুতি নেবেন না তারা।

আবার এমন প্রার্থীও আছেন, প্রস্তুতি নেওয়ার ইচ্ছে ও চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যারা কী পড়বেন আর কী বাদ দেবেন জানেন না। কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ না বোঝার কারণে পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। অর্থাৎ কী পড়বে আর কী বাদ দিবে সেটা বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষার তারিখ চলে আসবে। তখন স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা খারাপ হয়ে যাবে ভালো প্রস্তুতির অভাবে।

আবারও বলছি, অনেকে আছে শুধু পরীক্ষার দেয়ার জন্য পরীক্ষা দেবে, চাকরি জন্য নয়। তাই আপনি ভাবুন- ৩২ হাজার নয় ৩২ জন নিলেও আমি সেই লিস্টে থাকবো, ইনশাল্লাহ। তাহলে আপনার সেই মনোবল আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে।

এবার আসি এই অল্প সময়ে শর্টকাটে কী কী পড়বেন? আমি মনে করি, যেহেতু সময় কম তাই সব না পড়ে কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন। মানে, যেখান থেকে বেশি বেশি কিংবা বারবার প্রশ্ন আসে; সেই টিপিকগুলো বার বার যত্নসহকারে পড়ুন।

এখন প্রশ্ন হলো আমি তা কীভাবে বোঝবো? উত্তর একদম সহজ— আপনি যদি প্রাইমারি সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে খেয়াল করেন। তাহলে দেখতে পাবেন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে। (আপনার হাতে এতো সময় না থাকলে শুধু ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইটির সাজেশন ফলো করতে পারেন)।

যেমন- বাংলা অংশে বাংলা ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন থাকে বেশি থাকে এবং সাহিত্য থেকে কম আসে। দেখা গেছে যে, বাংলা অংশে ২০টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণ থেকে ১৮ থেকে ১৯ এর মতো প্রশ্ন থাকে এবং বাকি ১-২টি প্রশ্ন থাকে সাহিত্য থেকে। তাই এখন বাংলা সাহিত্য না পড়ে আগে ব্যাকরণ অংশ ভালোভাবে জোর দিয়ে পড়ুন। এখন আর পড়ার দরকার নেই।

একান্তভাবে পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নের সাথে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীমউদদীন পড়ুন। ব্যাকরণে প্রথমে কারক-বিভক্তি ভালো করে পড়ুন, এখান থেকে ২ থেকে ৪ টি প্রশ্ন থাকে, তারপর এক কথায় প্রকাশ, সমাস এই টপিকগুলো ভালো করে পড়ুন। সাথে বাগধারা, সন্ধি, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ।

ইংলিশ পার্টে ইংলিশ গ্রামার থেকে প্রশ্ন থাকে ১৯-২০। মানে ইংলিশ লিটারেচার থেকে মাঝেমধ্যে একটি প্রশ্ন থাকে। যেমন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে চার ধাপে ৯ সেটে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কেবল একটি প্রশ্ন ছিল ইংলিশ লিটারেচার থেকে। আর সেটি ছিল দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায়। অর্থাৎ, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৯ সেটে মোট ৭২০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মাঝে কেবল ১টি প্রশ্ন ছিল ইংলিশ লিটারেচার থেকে।

তাই আমি বলব, শর্টকাটে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই মুহূর্তে ইংলিশ লিটারেচার পড়া বাদ দিন। আর একান্ত পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন + William Shakespeare, John Milton এবং G.B. Shaw এর রচিত গ্রন্থের নামগুলো পড়তে পারেন। না পড়লেও বিশেষ সমস্যা নেই।

তাহলে এখন English Grammar-এ আগে Vocabulary না পড়ে থাকে নতুন করে না পড়াই উচিত। English Grammar-এ বেশি জোর দিন Parts of Speech, Tense। এই ২ টপিক থেকে ৪-৫টা প্রশ্ন থাকতে পারে। তারপর Preparation, Correct Spelling, Right form of Verbs, Subject Verb Agreement, Voice Change, Narration, Sentence Correction পড়তে পারেন। আর সাথে পড়ে ফেলুন Conditional Sentence.

আর সব বাদ দিন এখন। উল্লেখ্য যে, English এর টপিকগুলো একদম Basic থেকে “প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis” বইয়ে দেয়া আছে। আপনি বইটি থেকে পড়লে কারও হেল্প ছাড়াই সহজেই বুঝতে পারবেন।

এবার আসা যাক গণিতের অংশে। গণিতের জন্য বীজ গণিতের মান নির্ণয়, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, গড়, সংখ্যা, উৎপাদক, অনুপাত ও ভগ্নাংশ পড়ুন। সাথে ল.সা.গু. ও গ.সা.গু., ঐকিক নিয়ম। বাকি সব বাদ দিন এখন। এখানে বলে রাখি- শতকরা, গড় ও বীজগণিতের মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে। জ্যামিতির অংশ থেকে কেবল বিভিন্ন প্রকার কোণ, সমকোণী ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্র পড়ুন বাকি সব বাদ দিন।

সর্বশেষ আসি সাধারণ জ্ঞান পার্টে। সাধারণ জ্ঞানের অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি- এই চার বিষয়ের ওপর ২০ নম্বর থাকে সাধারণত। তবে মাঝেমধ্যে ভূগোল ও পরিবেশ থেকে ১/২টা প্রশ্ন এসে থাকে।

তবে মজার বিষয় হল, বিগত সালের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে দেখা গেছে- সাধারণ জ্ঞানের ২০ নম্বরের মাঝে ১২-১৪টি প্রশ্ন এসে থাকে বাংলাদেশে বিষয়াবলি থেকে। বাকি ৬-৮টি প্রশ্ন এসে থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং ভূগোল ও পরিবেশ থেকে।

সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলার প্রাচীনযুগ ও মধ্যযুগ পড়ুন। এরপর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ৬-দফা, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোঘল আমল, ইংরেজ আমল ভালো করে পড়ুন। সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পড়ুন।

সাধারণ জ্ঞানের অংশে বীরশ্রেষ্ঠগুলো ভালো করে পড়ুন। (তাঁদের জেলা, জন্ম সাল এসব পড়ে মাথা নষ্ট করবেন না কিন্তু। এইসব সংক্ষিপ্ত আকারে গুছিয়ে দেয়া আছে “প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis” বইয়ে) এই মুহূর্তে বিজ্ঞান, ICT নতুন করে আর কিছু পড়বেন না। আন্তর্জাতিক থেকে তেমন প্রশ্ন থাকে না। ২-১ টা যা থাকে কেবল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার সদরদপ্তর কোথায়?- এই জাতীয় প্রশ্ন থাকে।

তাই বাকি সব বাদ দিন। আর সাম্প্রতিক থেকে ১-২টা প্রশ্ন থাকে। তাই সব না পড়ে কেবল আলোচিত ঘটনাগুলো পড়ুন। বাকি সব বাদ দিন। সময় না পেলে সাম্প্রতিক না পড়াই উচিত। পড়লেও কেবল পরীক্ষার ১-২ দিন আগে পড়বেন। এখন পড়লে আবার ভুলে যেতে পারেন।

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য উপরিউক্ত টপিকগুলো ছাড়াও বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারেন; বিশেষ করে ৩৫তম-৪২তম।

তবে, বিসিএস প্রিলির সুশাসন, ভূগোল, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার এসব চাইলে বাদ দিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে দ্রুত শেষ করতে পারবেন। হাতে সময় না থাকলে এইসবের ব্যাখ্যা না পড়ে শুধু উত্তরগুলো পড়লেই হবে।

*এরপর আপনি পরীক্ষা হলে পরীক্ষার দেয়ার আগে নিজে নিজে বাসায় বসে ঘড়ির সময় মডেল টেস্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন, আপনি কত পান। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে – বাংলা-২০, ইংরেজি -২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০ এভাবে আলাদা করে দেয়া থাকলে।

যেমন “Authentic Publication” থেকে প্রকাশিত ‘‘Authentic Model Test & Short Suggestion’’ বইটিতে এমন বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে করে দেয়া মডেল টেস্ট দেয়া আছে। ফলে, আপনি সহজে বোঝতে পারবেন, আপনি কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন।

যে বিষয়ে কম নাম্বার পাবেন, পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়ে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন। যদি মডেল টেস্টে ৫০-৬০ নাম্বার পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ধরে নিবেন মোটামুটি ভালো। আর যদি ৬০-৭০ বা তারও বেশি পান, তাহলে ধরে নিবেন আপনার প্রস্তুতি অনেক ভালো।

উল্লেখ্য যে, পরীক্ষার্থী যেহেতু ১৩ লাখ। তাই একসাথে সব জেলায় পরীক্ষা হওয়ার সম্ভবনা কম। পরীক্ষা হবে শুধু এমসিকিউ এবং ভাইভা। রিটেন হবে না। মনে রাখবেন, এই কয়দিন দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার; যেন পরীক্ষার হলে গেলে কনফিউজ না হন।

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সকল পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।

লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার ও সাবেক সিনিয়র অফিসার (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)


সর্বশেষ সংবাদ