বাংলাদেশে সৌদির একদিন পর ঈদ পালন করা হয় কেন?
পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে থাকে। যেটাকে আমরা ভৌগোলিক ভাষায় আহ্নিক গতি বলি। এন্টি-ক্লকওয়াইজ তথা ঘড়ির সময়ের বিপরীত কাটার দিকে লক্ষ্য করলে পৃথিবীর গতিবিধিটা বুঝতে অনেকটা সহজ হয়। আর অন্যদিকে চাঁদ তার নিজ অক্ষে ধীরে ধীরে আবর্তিত হতে থাকে।
যার ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা দেশগুলোতে পূর্বের দেশগুলো থেকে চাঁদের আলোর উপস্থিতি আগে দেখতে পাওয়া যায়। কেননা, সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত হয়। আর চাঁদ ঠিক তার উল্টোটা। কারণ, চাঁদ আর পৃথিবী দুটো বিপরীত দিকে আবর্তিত হয়ে থাকে।
এক দেশ অথবা অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলেও অন্যদেশ বা অঞ্চলে চাঁদ দেখা নাও যেতে পারে। কারণ, চাঁদ দেখার জন্য সূর্য এবং চাঁদের মধ্যে ১০.৫ ডিগ্রি কোনের প্রয়োজন হয়। সূর্যের সময় অনুযায়ী যেখানে সময়ের পার্থক্য ৪-৬ ঘন্টার মতো লেগে যায়। আর অন্যদিকে চাঁদের বয়স যাই হোক না কেন, সেই কোণ অর্থাৎ ১০.৫ ডিগ্রি উৎপন্ন করতে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা সময় লাগে। আর এই ১৮-২০ ঘন্টা সৌরস সময় প্রায় একদিন।
পড়ুন: আসসালামু আলাইকুম, আমি শেখ হাসিনা: শুভেচ্ছা বার্তায় প্রধানমন্ত্রী
সুতরাং, যতক্ষণ পর্যন্ত চন্দ্র আর সূর্যের মধ্যে ১০.৫ ডিগ্রি কোন উৎপন্ন না হবে ততক্ষন চাঁদকে খালি চোখে দেখা সম্ভব না। আর এটা কি বাংলাদেশ, কি পাকিস্তান, আর কি সৌদি আরব! পৃথিবীর সব রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রেই চাঁদ দেখার জন্য ১০.৫ ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন।
ভৌগলিক সময়ের সাথে পরিচিত হওয়ার পর এবার আমাদের মনে উত্থিত প্রশ্নের দিকে আসা যাক। বাংলাদেশ আর সৌদি আরবের মধ্যে ৩ ঘন্টা ব্যবধানে সূর্য অস্ত এবং উদিত হয়। অথচ, সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে একদিন পরে ঈদ পালন করা হয় কেন?
বাংলাদেশ আর সৌদি আরবের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪,৫৮৭ কি.মি.। যা সৌর সময় হিসেব মতে ৩ ঘন্টা এগিয়ে থাকলেও চন্দ্র সময় হিসেবে ২১ ঘন্টা পিছিয়ে আছে। আর এই ২১ (২৪-৩) ঘন্টা প্রায় একদিনের সমান।
অর্থাৎ আমরা বাঙালিরা সৌদি আরব থেকে চন্দ্র সময় অনু্যায়ি একদিন পিছিয়ে আছি। আর সেজন্য সৌর সময়ে আমরা সৌদি আরবের একদিন পরে চাঁদের আলো দেখতে পাই। কিন্তু, চন্দ্র সময়ের হিসেব কষলে আমরা একইদিনেই সব পালন করি। মানে চন্দ্র সময়ে আমরা সবাই একই দিবসে রমজানের রোজা, ঈদসহ আরো বিভিন্ন উৎযাপন করে থাকি।
পড়ুন: ঈদের দিনও বৃষ্টি হতে পারে
যেহেতু আমরা মুসলিম উম্মাহরা চন্দ্রবর্ষ হিসেব করে আমাদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক উৎসব (রোজা, লাইলাতুল কদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা) পালন করে থাকি। তা মূলতঃ পৃথিবীর সকলেই একদিনে পালন করে থাকি। মানে আরব, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশীয়াসহ আমরা সব দেশেই একই চন্দ্রদিবসে পরিচালিত হই। শুধু, টাইমজোন আলাদা হওয়া সৌর সময় ও চন্দ্র সময় আপাতদৃষ্টিতে পৃথক মনে হয়ে থাকে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ