বিসিএস যাদের ক্যারিয়ার প্ল্যান

  © ফাইল ফটো

একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি উক্তি করেছেন, ‘A good plan is a success half-done whereas a bad plan is a possible failure in progress.’ অর্থাৎ একটি সুন্দর পরিকল্পনা করতে পারলে তাতে সফলতার পথে অর্ধেক এগিয়ে যাওয়া যায়, পক্ষান্তরে খারাপ পরিকল্পনা সাফল্যের পথে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁঁড়ায়।

‘ক্যারিয়ার’ অর্থ কীভাবে কোন ব্যক্তি তাঁর জীবন অতিবাহিত করবেন বা কোন পেশায় কাজ করবেন। সব মানুষের কাছে সব পেশা ভালো লাগবে না- এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন রকমের পেশা আছে; যেমন সাধারণ ব্যবসা, উদ্দ্যেক্তা হওয়া, চাকরি, বিদেশ পাড়ি দেওয়া, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা ইত্যাদি। কারও কাছে ব্যবসা ফেভারিট হতে পারে।

কেউ ভাববেন, ব্যবসায় ও উদ্দ্যেক্তা হতে অনেক ঝুঁকি আছে, তাই চাকরিতে যাই। যথাসময়ে সঠিক পন্থায় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করতে না পারলে ও প্ল্যান অনুযায়ী পরিশ্রম না করলে জীবনে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।

বাংলাদেশে যতগুলো পেশা আছে তার মধ্যে অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত মানুষের তীব্র স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা থাকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডার হওয়ার। এ লেখাতে আমি যে বিষয়গুলো আলোচনা করব তা মূলত বিসিএস চাকুরী প্রত্যাশীদের জন্য।

পরবর্তীতে স্কলারশিপ/ফেলোশীপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার/গবেষণার (পিএইচডি, পোস্ট-ডক) জন্য বিদেশ যাওয়া, উদ্যেক্তা হওয়া সম্পর্কে লিখব। বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস।

বর্তমানে জেনারেল ও টেকনিক্যাল ক্যাডার মিলিয়ে মোট ২৭টি ক্যাডার আছে। জেনারেল ক্যাডারগুলোতে একাডেমিক যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোন বিষয়ের শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারেন। তবে টেকনিক্যাল ও পেশাগত ক্যাডারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি উচ্চশিক্ষিত নাগরিকদের চাহিদা বাড়ছে।

তার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো

১) চাকরির নিরাপত্তা আছে।
২) চাকরির সামাজিক মর্যাদা বেশী।
৩) উচ্চশিক্ষার জন্য ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি নেওয়া যায়।

৪) প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফর করার সুযোগ আছে।
৫) রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগ।

যারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে আসতে পরিকল্পনা করেছেন তাঁদের নিজেকে অনেক আগে থেকে সময়ের সাথে সাথে প্রস্তুত করা অবশ্যই করণীয় কারণ অধিকাংশের স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডার হওয়ার; ফলে বিসিএস চাকরীর পাওয়ার প্রতিযোগিতা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

বিসিএস প্রস্তুতিতে যা করণীয়

১) যারা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে, তাদের উচিত নিজ একাডেমিক বিষয়কে অবহেলা না করে ও অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করে প্রস্তুতি শুরু করা। তবে যারা অন্যান্ন বর্ষে পড়ছে, তাদের অবশ্যই অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবে। প্রবাদ আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। প্রথমেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটা খুব ভালো করে পড়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

২) গাইডকে কম গুরুত্ব দিয়ে বিসিএস সিলেবাস সংশ্লিস্ট বেসিক বইগুলো বিভাগের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন নির্বাচন করে ক্লাস সিক্স টু টেন এর বোর্ডের বই সহ এইচএসসি এর পৌরনীতি ও কম্পিউটার বই মনোযোগ সহকারে পড়াটা আবশ্যক।

৩) কোচিং সেন্টারে বা টিউশনে ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞান পড়ালে তা বিসিএস প্রস্তুতিতে নিজেরও কাজে লাগবে এবং একই সাথে বিসিএস ভাইভায় কথা বলার আড়ষ্টতা কাটবে।

৪) স্নাতক অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির শুরু থেকে বা স্নাতক অনার্স ভর্তির যত শীঘ্র সম্ভব ভালো মানের বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত মনোযোগ সহকারে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খাতায় নোট রাখলে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রস্তুতিতে ভিত (Base) তৈরি করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বিবিসি বাংলা খবর ও বিবিসির বিশ্লেষণধর্মী আন্তর্জাতিক নিউজ এই প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে।

৫) বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী ইংরেজি গ্রামার ও লিটারেচার প্র্যাকটিসের পাশাপাশি ইংরেজি vocabulary (শব্দভাণ্ডার) নিয়মিত বৃদ্ধি করাটা জরুরী। ইংরেজি পত্রিকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫টি Words (প্রত্যেকটির Synonyms and Antonyms সহ) মেমোরাইজ করে নোট খাতায় লিখে রাখতে হবে এবং শেখা Words পরে পুনরায় প্র্যাকটিস করতে হবে।

৬) বাংলা সাহিত্য ও ইংরেজি লিটারেচারের কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিতি ও বইগুলোর নাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নোট খাতায় লিখে বারবার চর্চা করতে হবে।

বিসিএস প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো

বিসিএস প্রস্তুতিতে কিছু মৌলিক বই আছে। যেমন- ১) অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান) ২) লাল নীল দীপাবলি (ড. হুমায়ুন আজাদ) ৩) বিদ্যাকোষ; বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (ড আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ) ৪) Applied English Grammar and Composition (P. C. Das; ভুল এড়ানোর জন্য ভারতের অরিজিন্যাল বইটি বেশী উপকারী) ৫) A Passage to the English Language (S. M. Zakir Hussain) ৬) বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর (ড. তারেক শামসুর রেহমান) ৭) বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১) লেখক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ৮) নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি (ড. তারেক শামসুর রেহমান)।

ভয় পাওয়ার কিছু নাই। বিসিএস সাফল্যের মূল বিষয় হলো: যথাশীঘ্র সম্ভব প্রস্তুতি আরম্ভ করে অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করে নিয়মিত চর্চা করা। এ সাফল্যে মেধার ভূমিকা ১% ও নিয়মিত যথাযথভাবে কঠোর পরিশ্রমের ভূমিকা ৯৯%। পরিশ্রমীদের জন্য শুভকামনা।

লেখক: অধ্যাপক, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ